যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের বড় একটা অংশই থানায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। এর কারণ হিসেবে তারা পুলিশের দ্বারা হেনস্তা হওয়ার কথা বলছেন। ৯৫ শতাংশ নারীই মনে করেন, পুলিশি সহায়তার জন্য গেলে হেনস্তার শিকার হতে হয়। তবে পুলিশ বিভাগ থেকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে- কীভাবে নারীদের সমস্যা বা অভিযোগগুলো আরো নির্দিষ্ট করে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তারই অংশ হিসাবে প্রতিটা থানায় একজন করে নারী পুলিশ রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে একজন নারীর কাছে তার অভিযোগ তুলে ধরতে সমস্যা না হয়। আজ শুক্রবার(২৯ জানু) বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) আয়োজিত অনলাইনে ‘অ্যাডা লাভলেস সেলিব্রেশন’ রাউন্ড টেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার সৈয়দ নাসিরুল্লাহ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, হাইটেক পার্ক অথোরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, এনডিসি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নোভা আহমেদ, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আইএসপিএবি’র প্রেসিডেন্ট আমিনুল হাকিম ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি বিসিএসের প্রেসিডেন্ট শাহিদ উল মুনির।
যেসব কারণে নারীরা নির্যাতনের বিষয়ে কোথাও অভিযোগ করেন না তার অন্যতম হলো, লোকনিন্দার ভয়, পরিবারের সুনামের কথা চিন্তা, অভিযোগ করে কোনো কাজ হয় না, অভিযোগ করার জটিল পদ্ধতি ইত্যাদি। দেশের ৯৫ শতাংশ নারী মনে করেন, পুলিশি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার হতে হয়, পুলিশ অভিযোগকারীকেই দোষারোপ করে, মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করে, অভিযোগ করে কোনো ফল পাওয়া যায় না, পুলিশ কর্তৃক পুনরায় হয়রানির আশঙ্কায় কোনো নারীই অভিযোগ করেন না।
অ্যাডা লাভলেস সেলিব্রেশন’ রাউন্ড টেবিল আলোচনায় সৈয়দ নাসিরুল্লাহ বলেন, পুলিশ বিভাগ থেকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে- কীভাবে নারীদের সমস্যা বা অভিযোগগুলো আরো নির্দিষ্ট করে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তবে, এ সংক্রান্ত প্রত্যেক সরকারি সংস্থা বা বিভাগকে একসঙ্গে বসে কাজ শুরু করতে হবে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে শুধু আলোচনাই হচ্ছে। এবার বাস্তবায়ন শুরু করা উচিত।
দেশে প্রায় ৪ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন। তাদের ট্রেনিংয়ের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে আইএসপিএবির আমিনুল হাকিম বলেন, ২০০৬ সালে আইএসপিএবি থেকে একটি ইমারজেন্সি সাইবার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়। সেক্ষেত্রে গ্রাম পর্যায়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তখন সচেতনতা তৈরি করায় আমরা অল্প পরিসরে বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে যেমন বুকলেটের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে করণীয় প্রচারণা। এ বছর সেটা বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিসিএসের প্রেসিডেন্ট শাহিদ উল মুনির আমিনুল হাকিম বলেন, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট-১ আইনটি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। তবে রাতারাতি কোনো পরিবর্তন হবে না। অনেক সময় সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলেও ভিকটিম তা বুঝতে পারে না। ভিকটিমকে এই আইন সম্পর্কে ভালোভাবে সচেতন করতে হবে যাতে সে নিজেই এই বিষয়ে মোকাবিলা করতে পারে। সবাই মিলে কাজ শুরু করে দিলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করেন তিনি।
এ বছর থেকেই সাইবার আইনটি সম্পর্কে ভিকটিমদের সচেতন করা এবং থানায় অভিযোগ করানোর বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে সবার সমন্বয়ে কাজ শুরু করতে হবে জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।
তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব তো আছেই, তার ওপর অপরাধীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসনেরও প্রশ্রয় পাচ্ছে। আইনকে প্রভাবিত করার এই প্রচেষ্টা যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। তারা মনে করেন, আমাদের পুলিশ প্রশাসন চাইলেই অপরাধীদের চিহ্নিত ও ধরতে পারেন। সে জন্য সামাজিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তাতে সরকার ও প্রশাসন বাধ্য হবে ব্যবস্থা নিতে। তারা মনে করেন, বিচার না হওয়ার প্রবণতায় দিন দিন নারীর প্রতি হয়রানি-সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথোরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, মেয়েদের সাহসী হতে হবে। আমাদের দেশের মেয়েরা অনেক সময় পরিস্থিতির শিকার হয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না শুধু সাহস এবং সাইবার আইন সম্পর্কে সঠিক তথ্য বা ধারণার অভাবে। এসব এসব বিষয়ে হাইটেক পার্ক অথোরিটিতে এলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৩
আপনার মতামত জানানঃ