আনিস রায়হান
২০১৮ সালে কোটাপ্রথা ও সরকারের কোটা রাজনীতি
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ প্রথা চলে আসছে দেশ গঠনের অব্যবহিত কাল পর থেকেই। দেশে সরকারি চাকরিতে ২০টি গ্রেড রয়েছে। ৮ম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগ হয় সরকারি ও রাষ্ট্রীয়ভাবে। গণপরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণ নিয়োগ হয় ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডে। আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে এসব চাকরিতে ৮০ শতাংশ পদে নিয়োগ হতো কোটায়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মাত্র ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার প্রচলন ছিল। এরপর ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করা হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে এর সঙ্গে আবার প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারিত হলে মোট সংরক্ষিত কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাভেদে এসব পদের কোটায় অগ্রাধিকারে কিছু ভিন্নতা আছে।[১]
দেশে বেকারত্ব এবং বেসরকারি খাতের চাকরির অস্থায়ীত্ব ও সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে সরকারি খাতের চাকরির প্রতি তরুণদের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরিতে অধিকাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম থাকায় কোটা সুবিধা যারা দাবি করতে পারে না তাদেরকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়। যে কারণে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোটাপ্রথার বিষয়ে চরম ক্ষোভ ছিল। ২০১৮ সালে এ নিয়ে তারা জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলে। সে সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবি ছিল মূলত ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি) কোটা সংস্কার করা। এসব গ্রেডে তখন ৫৬ শতাংশ নিয়োগই ছিল কোটায় সংরক্ষিত। ৫৬ শতাংশ কোটার বিন্যাস ছিল, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা। শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা ছিল, তাতে পরে তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের যুক্ত করা হয়।[২]
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের কোটা সুবিধা প্রদানের মধ্যে একটা অভীপ্সা কাজ করে। আওয়ামী লীগ মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের পরিবারগুলো তুলনামূলক বেশি তাদের দলের সমর্থক এবং তাদের নীতির অনুসারী। এ কারণে রাষ্ট্র পরিচালনায় এসব পরিবার থেকে যত বেশি মানুষ আসবে, যত বেশি এসব পরিবারের লোক সরকারি চাকরি পাবে, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশে আওয়ামী লীগের অবস্থান তত শক্তিশালী হবে। যে কারণে আওয়ামী লীগ এই কোটার প্রবল সমর্থক এবং এর মধ্য দিয়ে যারা আসে, তাদের মধ্য থেকে পরীক্ষিত আওয়ামী সমর্থক পরিবার বা আওয়ামী রাজনীতিতে অবদান রয়েছে এমন প্রার্থীদেরই তারা সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করে। রাষ্ট্রের ওপর আওয়ামী মতাদর্শের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতেই তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে কাজে লাগায়। তবে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কোটা রাজনীতি নিয়ে খুব সচেতনতা ছিল, তেমনটা লক্ষ্য করা যায় না। তারা বরং দেশে আর্থিক ও পেশাগত নিরাপত্তাহীনতার কারণেই প্রধানত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। কোটা সংস্কার বা বাতিল দু ধরনের মতই তাদের মধ্যে দেখা যায়। মুক্তিযোদ্ধারা কোটার ন্যায্য দাবিদার হলেও তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের কোটা সুবিধা প্রদানের কোনো ন্যায্য কারণ নেই বলে তারা মনে করেন। তারপরও যদি সেরকম কোনো কারণ থাকে তাহলে মুক্তিযোদ্ধা, আদিবাসী, নারী ও পশ্চাৎপদ অঞ্চলসহ সর্বমোট ১০ শতাংশ কোটা সর্বোচ্চ রাখা যায় বলে নানা সময় তারা মতপ্রকাশ করেন। তবে কোটা বাতিলের যুক্তিও এসেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ততদিনে প্রায় ৫০ বছরের দোরগোড়ায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ততদিনে চাকরি কোন ব্যাপার নেই। তাছাড়া এত বছর ধরে রাষ্ট্রের যে পরিবর্তন ও উন্নয়ন তাতে করে পশ্চাৎপদ গোষ্ঠী বা অঞ্চল বলে কিছু নেই।[৩] আদিবাসী, নারী বা জেলা কোটা যারা দাবি করতে আসেন, তারা দরিদ্র বা প্রান্তিক কেউ নন। বরং ধনী পরিবারের নারী, আদিবাসীদের মধ্যেকার অভিজাত পরিবারের সদস্যরা এবং পশ্চাৎপদ জেলার ধনী ও সুযোগ সুবিধার মধ্যে থাকা পরিবারের সদস্যরাই কার্যত সরকারি চাকরিতে কোটার সুবিধা গ্রহণ করেন। তাই সরকারি চাকরির বৈষম্য দূরীকরণে কোটা প্রথা সম্পূর্ণ বাতিল করে দেয়া যায়। আর সত্যিকারের পশ্চাৎপদ যারা, তাদের বিকাশের জন্য রাষ্ট্র বিশেষ প্রকল্প ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
কোটা সংস্কার দাবি ও ‘রাজাকার’ তকমা
কোটা বাতিল বা সংস্কার এমন নানামুখী মত নিয়েই শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে এর বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করে আসছিলেন। ২০১৮ সালে এই দাবি আন্দোলনে রূপ নিতে সমর্থ হয়। প্রথমে কার্যত বিচ্ছিন্নভাবে এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের কঠোর মনোভাব, সরকার ও সরকারি দলের নিপীড়ন এই আন্দোলনকে সংগঠিত ও শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম পর্ব ২০১৮ ছিল আগাগোড়াই চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। যদিও আন্দোলনের ওপর দমন নিপীড়নে ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং ছাত্রদের আন্দোলনের দাবিকে ন্যায্য ও যৌক্তিক মনে করেছে সমাজের বিরাট অংশই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতি পর্যায় থেকেও আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য-বিবৃতি এসেছে, যারা কিনা সাধারণভাবে তখনও ছিল সরকারি মতেরই সমর্থক। ১১ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি যৌক্তিক। আমি কোটা সংস্কারের এই যৌক্তিক দাবি সমর্থন করি এবং সরকারের প্রতি বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানাই। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি দ্রুত কোটা সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানায়। শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামও কোটা সংস্কারের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।[৪]
জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়ে কোটাপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে প্রচারণা ও কার্যক্রম চলার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সভায় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ গঠিত হয়। এরপর এই সংগঠনের ডাকে শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচি পালন শুরু হলে সরকার এক পর্যায়ে কোটা সংস্কারে অস্বীকৃতি জানায়।[৫] তবে মার্চ মাসে কোটা সংরক্ষণ প্রথা শিথিল করে কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে পূরণ করার আনুষ্ঠানিক আদেশ প্রদান করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।[৬] কিন্তু সকল দাবি পূরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতে থাকে। মার্চ মাসে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা, টিয়ার শেল ও গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হয়। এপ্রিল মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন সারা দেশে বিস্তার লাভ করে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে এবং এটা কোনো সরকারবিরোধী আন্দোলন নয় বলে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কারকামীদের সভা-সমাবেশ। তবে তাতে চিড়ে ভেজেনি।
৮ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে শাহবাগে মিছিল করলেও ৯ এপ্রিল জাতীয় সংসদে সরকারের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরি খুবই কড়া ভাষায় আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে এর পেছনে ‘জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট’ ইন্ধন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেব’।[৭] শিক্ষার্থীরা এর পরদিন ১০ এপ্রিল বিকেল পাঁচটার মধ্যে মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরিকে ক্ষমা চাওয়ার সময় বেঁধে দেন এবং এর মধ্য দিয়ে আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করে। ১০ ও ১১ এপ্রিল আন্দোলনকারীদের অবস্থান ও অবরোধে সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়লে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।[৮]
শেখ হাসিনার কোটা বাতিলের ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ
শেখ হাসিনার সেই ঘোষণা কোনো সুবিবেচিত পদক্ষেপ ছিল না। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের চাপে একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়েই তিনি অমন ঘোষণা প্রদান করেছিলেন। কারো সঙ্গে আলাপ বা কোনো ধরনের সমন্বয় ব্যতিরেকে একতরফাভাবে ওই ঘোষণা আসে আকস্মিকভাবে। বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে অভিযোগ করা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যত না কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল সমস্যাটি সমাধানের দিকনির্দেশনা এসেছে, তার চেয়ে বেশি এসেছে ক্ষোভ প্রকাশ, বিরক্তি ও হুমকি। লক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দিলেন, সেটি বাস্তবায়িত হলে এর বিরুদ্ধে যে কেউ রিট করলে তা খারিজ হয়ে যাবে। কারণ, সংবিধানে এ বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। এই ঘোষণায় কূটচাল রয়েছে। আন্দোলনকারীদের দমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।’[৯]
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই ঘোষণা যে চিন্তাশীল কোন পদক্ষেপ ছিল না, তা প্রমাণ হয় পরবর্তী ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করতে থাকে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয় না। চলতে থাকে দীর্ঘ কালক্ষেপণ, চলে যায় মাসের পর মাস। তবু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোটা বাতিল বা তার বক্তব্যের মধ্যে আসা কোটা পর্যালোচনা কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেন। কিন্তু ঘোষণার ২৬ দিন পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব এক প্রশ্নের জবাবে জানান, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, অগ্রগতিও নেই।[১০] শিক্ষার্থীরা প্রজ্ঞাপন নিয়ে টালবাহানার বিপরীতে আবার অবরোধ ও ধর্মঘটের কর্মসূচিতে যান এবং সরকারকে আলটিমেটাম প্রদান করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ১২ মে ২০১৮ বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই বলছি যারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের অধিকাংশই ছাত্র শিবিরের।’ আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থী কিনা সেটা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা সবাই যদি শিক্ষার্থী হয়, তাহলে তাদের মধ্যে একটা শিষ্টাচার থাকা উচিত, আমি মনে করি ছাত্রদের পক্ষ থেকে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া শিষ্টাচার বহির্ভূত।’[১১]
দু দিন না পেরোতেই আন্দোলন নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন স্বয়ং শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঘোষণা বাস্তবায়নে সময় লাগতেই পারে। হুমকি, আলটিমেটাম প্রদানকে তিনি বাড়াবাড়ি আখ্যা দেন।[১২] তার এমন মন্তব্যের পর সরকার ও সরকারি দলের দায়িত্বশীলদের অধিকতর কঠোর অবস্থান নিতে দেখা যায়।
ছাত্রলীগ–প্রশাসনের ধারাবাহিক হামলা–নিপীড়ন
এর আগে সরকার ও সরকারি দল কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিলেও সেক্ষেত্রে তারা ছিল সংযত। ১৬ এপ্রিল ২০১৮ আন্দোলনের তিনজন নেতাকে তুলে মিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। আন্দোলনকারীরা এই ঘটনাকে অপহরণ হিসেবে অভিহত করে। তবে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্দোলনে সহিংসতার কিছু বিষয়ে তথ্য জানার জন্য তাদের ডাকা হয়েছিল। এরপর তাদের যথাযথ সম্মানের সঙ্গে ছেড়ে দেয়া হয়।[১৩] তবে আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষের তথ্য প্রকাশের পর পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। যদিও সংঘাত তখনই লেগে যায়নি, কারণ ইতোমধ্যে রমজান এবং ঈদকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শিথিল হয়ে পড়ে। ঈদের ছুটির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাণ ফিরে আসতে আরও কিছুদিন চলে যায়। ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই মাস গত হলেও প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
৩০ জুন ২০১৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সেদিন সকালেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মধুর ক্যানটিনে জড়ো হন। পরে সকাল ১০টার দিকে গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক, ফারুক হোসেন, আতাউল্লাহসহ কয়েকজন নেতা গ্রন্থাগারের সামনে যান। তারা সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সেখানে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একযোগে ‘শিবির ধর’, ‘শিবির ধর’ বলে আন্দোলনকারী নেতাদের ধাওয়া করলে তারা গ্রন্থাগারে ঢুকে পড়েন। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। সবচেয়ে বেশি মারধরের শিকার হন যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক; তার নাক-মুখ ফেটে রক্ত বের হতে দেখা যায়। তিনি অধ্যাপক জাবেদ আহমদের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানাতে থাকেন। ওই শিক্ষক নিজের পরিচয় দিয়ে ছাত্রটিকে রক্ষার চেষ্টা করলেও হামলাকারীরা নিবৃত্ত হননি। বরং নিজের হাতে আঘাত পান অধ্যাপক জাবেদ।
মারধরের শিকার আহত নুরুলকে হাসপাতালে নিতেও বাধা দেন হামলাকারীরা। পরে তাকে পেছনের দরজা দিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেও ছাত্রলীগের একটি পক্ষকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। শাহবাগের জাতীয় গণগ্রন্থাগার থেকেও খুঁজে খুঁজে আন্দোলনকারীদের মারপিট করা হয়।[১৪]
এরপর থেকে সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীরা পুলিশি নির্যাতন এবং সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের উপর্যুপরি হামলার শিকার হয়েছে। ৩০ জুনের ভয়াবহ হামলার পর এর প্রতিবাদে ০১ জুলাই ২০১৮ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিবাদ কর্মসূচী আয়োজন করা হলে ছাত্রলীগ তাতে হামলা চালায় এবং শিক্ষার্থীদের জড়ো হতে বাধা দেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় অন্তত ১০জনকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দিবস হওয়ার কারণে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি স্থগিত রাখে আন্দোলনকারীরা। তা সত্ত্বেও আন্দোলনকারী ভেবে শাহবাগে চলচলকারী কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ। ফেসবুকে আগের দিকনের মারপিটের সমালোচনা করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে খুঁজে বের করে পেটানো হয়। একই দিন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায় শাহবাগ থানায় আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের করা এক মামলায় রাশেদ খানকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন যে রাশেদ খান ফেসবুক লাইভে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।[১৫] ওই দিন নেতৃবৃন্দের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বঘোষিত মানববন্ধনে বাধা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। সেইসঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শাবির আহ্বায়ক মো. নাসির উদ্দিনকে শাহপরান হলে আটকে রাখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।[১৬]
পরদিন ০২ জুলাই ২০১৮ সকাল ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কালো পতাকা মিছিলের কথা থাকলেও ছাত্রলীগের অবস্থানের কারণে সামনে আসতে পারেনি কোটা আন্দোলনকারীরা। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মোটর সাইকেলে মহড়া দিতে দেখা যায় ছাত্রলীগের নেতাদের। পরে জাতীয় পতাকা হাতে বিকেল ৪টার দিকে প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী পুলিশের উপস্থিতিতেই লাঠি, রড, হাতুড়ি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে আন্দোলনকারীদের। মারধরে কোটা আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফসহ অন্তত ১১ জন আহত হয়। প্রায় মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে যান কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তারেক। তাকে চাঁপাতি, হাতুড়ি, বাঁশ দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হামলায় তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়। চিকিৎসকরা জানান, তার মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। সারা শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।[১৭]
ছাত্রলীগের হাতুড়িপেটার ঘটনায় গোটা দেশ স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন মিলে যখন লাঠি নিয়ে তরিকুলকে পেটাচ্ছিল তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল-মামুন হাতুড়ি দিয়ে তার পিঠে ও পায়ে আঘাত করে। এ ঘটনার ভিডিও ও ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিক থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তাই অনেকেই ধারণা করেছিলেন মামুন গা ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু মাছরাঙা টেলিভিশনকে দেয়া বক্তব্যে তিনি গর্বের সাথে জানিয়েছেন, তিনি ক্যাম্পাসেই আছেন। নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করছেন। তার কোনোরকম মানসিক চাপও নেই এবং এই কৃতকর্মের জন্য তার কোনো অনুশোচনাও নেই।[১৮] ৯ জুলাই ২০১৮ কোটাবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি প্রদান করে। এর একদিন পরেই সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং নরওয়ে দূতাবাসও বিবৃতি দেয়।[১৯]
অব্যাহত আন্দোলন ও দাবি আদায়
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের এই হামলার সঙ্গে সমানতালে চলতে থাকে পুলিশী নিপীড়ন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের প্রশাসনিক বা দলীয়, কোনো ধরনের নিপীড়নের বিরোধিতা করেনি। এর আগে মৌখিক বক্তব্যে কোটা সংস্কারকে যৌক্তিক বললেও আন্দোলনে গ্রেপ্তার ছাত্রদের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার আছে নাকি? যা হবে আইনি কাঠামোর মধ্যেই হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় ১৮ বছর বয়স হলে ব্যক্তিকে তার নিজের দায়দায়িত্ব নিতে হয়। সবার জন্যই এই আইন প্রযোজ্য।’ তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের কাঁধে ভর দিয়ে যেন কোনো অশুভ শক্তি তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিনষ্ট করার কোনো অপপ্রয়াস সহ্য করা হবে না। গণমাধ্যম এ সময় ১০জন আন্দোলনকারীর গ্রেফতার ও একজনের নিখোঁজ থাকার তথ্য প্রদান করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, তরিকুল, জসিমউদ্দিন, মশিউর, আমানুল্লাহ, মাজহারুল, জাকারিয়া, রমজান ওরফে সুমন ও রবিন। আর নিখোঁজ ছাত্রের নাম মাহফুজ। গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পুলিশ আন্দোলনকারী ও তাদের সমর্থনে সযে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ জোরপূর্বক পণ্ড করে দিতে থাকে। নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। খুলনায় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিপেটা করে বলে জানা যায়। কোনো বাধা না আসায়, বরং সমর্থন পেয়ে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যও এ সময় বাড়তেই থাকে। শিক্ষার্থীদের যেকোনো কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়া। ক্লাস বর্জন করলে ক্লাসে যেতে হুমকি দেওয়াসহ ছাত্রদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছে তারা। ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক ছাত্র একরামুল হককে হল থেকে বের করে দেয় তারা।[২০]
অবশেষে আন্দোলন জোরদার হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ৭৫ দিন পর কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনার সুপারিশ করার জন্য সচিব কমিটি গঠন করে সরকার। দায়িত্বরত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটির সদস্য ছিলেন অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আক্তারি মমতাজ এবং লেজিসলেটিভ বিভাগের সিনিয়র সচিব শহিদুল হক।[২১]
একদিকে চলে কোটা পর্যালোচনা কমিটির কার্যক্রম, অন্যদিকে চলতে থাকে ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশের গ্রেপ্তার, পিটুনি। ১৫ জুলাই ২০১৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার পাদদেশে কোটার পক্ষে মানববন্ধন শেষে ফেরার পথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার হয়। দুপুর পৌনে ১টার দিকে শিববাড়ি মোড়ে শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।[২২] এরপর কোটা সংস্কার করা, আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচার, আটকৃতদের মুক্তি ও বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যে ২২ জুলাই ২০১৮ বিকাল তিনটায় ছাত্র সমাবেশের ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ক্যাম্পাস, কোটা সংস্কার, হামলাকারীদের বিচার ও কোটা আন্দোলনের আটককৃতদের মুক্তির দাবি করেন। এ সময় সামবেশের আশে পাশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। সমাবেশ শেষে ফেরার পথে আন্দোলনকারীদের একাংশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক আন্দোলনকারীকে মারধর করেন তারা। হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাদেরকে পাল্টা ধাওয়া দেয় তারা। একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করার অপপ্রয়াসের’ প্রতিবাদে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকবৃন্দ। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের প্রধান ফটকের সামনে ‘সচেতন শিক্ষক সমাজ’ এর ব্যানারে তারা এ মানববন্ধনে অংশ নেয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। এর আগে কোটা আন্দোলনে সংহতি জানালেও এদিন মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে ও নিপীড়নের নামে মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।[২৩]
অথচ ২২ জুলাই ২০১৮ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, এর আগের দিনই নাকি চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাদের বলেন, ২১ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাদের বলেছেন, তিনি তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ শুনেছেন। এ ধরণের অভিযোগ যেন আর না শোনেন, এমন হুশিয়ারি দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন কাদের।[২৪]
চলবে…
তথ্যসূত্র
- সরকারি সব চাকরির কোটা সংস্কারের নতুন দাবি, দৈনিক প্রথম আলো, ১১ জুলাই ২০২৪, ছাপা সংস্করণ, ১ম পাতা
- সরকারি সব চাকরির কোটা সংস্কারের নতুন দাবি, দৈনিক প্রথম আলো, ১১ জুলাই ২০২৪, ছাপা সংস্করণ, ১ম পাতা
- কোটাবিরোধী আন্দোলনের গোড়া যেখানে, দৈনিক প্রথম আলো, অনলাইন সংস্করণ, ১৭ এপ্রিল ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৯ জুলাই ২০২৪ রাত ২১.২৫ এ সংগৃহীত, prothomalo.com/opinion/reaction/কোটাবিরোধী-আন্দোলনের-গোড়া-যেখানে
- কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক: ঢাবি ভিসি, বাংলা ট্রিবিউন, ১১ এপ্রিল ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৯ জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যা ১৮.৫০ এ সংগৃহীত, com/national/313481
- ‘আপাতত’ কোটা সংস্কার নয়, দৈনিক সমকাল, ছাপা সংস্করণ, ০৯ মার্চ ২০১৮, ১ম পাতা
- মেধাতালিকা থেকেই কোটার শূন্য পদ পূরণ, দৈনিক সমকাল, ছাপা সংস্করণ, ০৮ মার্চ ২০১৮, ১ম পাতা
- রাজাকারের বাচ্চাদের দেখে নেবো: কোটা সংস্কার নিয়ে মতিয়া, বাংলা ট্রিবিউন, ১০ এপ্রিল ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৭ জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যা ১৮.১২ তে সংগৃহীত, com/national/313063
- কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী, দৈনিক প্রথম আলো, ছাপা সংস্করণ, ১২ এপ্রিল ২০১৮, ১ম পাতা
- প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণায় ‘কূটচাল’ দেখছে বিএনপি, দৈনিক প্রথম আলো, অনলাইন সংস্করণ, ১২ এপ্রিল ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৭ জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যা ১৯.৪৫ এ সংগৃহীত, prothomalo.com/politics/প্রধানমন্ত্রীর-কোটা-বাতিলের-ঘোষণায়-‘কূটচাল’-দেখছে
- ‘শিগগিরই’ কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন, দৈনিক প্রথম আলো, ছাপা সংস্করণ, ৮ মে ২০১৮, ২য় পাতা
- বাংলাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ও সরকার মুখোমুখি অবস্থানে, বিবিসি বাংলা, ১৩ মে ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৭ জুলাই ২০২৪ রাত ২৩.২০ এ সংগৃহীত, bbc.com/bengali/news-44099424
- আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার ছাত্র ধর্মঘট চলবে, দৈনিক প্রথম আলো, ছাপা সংস্করণ, ১৫ মে ২০১৮, ১ম পাতা
- তিন নেতাকে চোখ বেঁধে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, দৈনিক সমকাল, ছাপা সংস্করণ, ১৭ এপ্রিল ২০১৮, ১ম পাতা
- খুঁজে খুঁজে মারল ছাত্রলীগ, দৈনিক প্রথম আলো, ছাপা সংস্করণ, ১ জুলাই ২০১৮, ১ম পাতা
- ঢাকা ও রাজশাহীতে মারমুখী ছাত্রলীগ, দৈনিক প্রথম আলো, ছাপা সংস্করণ, ০২ জুলিয়া ২০১৮, ১ম পাতা
- কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচিতে শাবি ছাত্রলীগের বাধা, জাগোনিউজ ২৪ ডটকম, ০১ জুলাই ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৯ জুলাই ২০২৪ রাত ২১.৩০ মিনিটে সংগৃহীত, jagonewscom/campus/news/436776
- কোটা আন্দোলন দমনে আগ্রাসী ভূমিকায় রাবি ছাত্রলীগ, দৈনিক নয়াদিগন্ত, অনলাইন সংস্করণ, ০৪ জুলাই ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৯ জুলাই ২০২৪ রাত ২২.০০ এ সংগৃহীত, dailynayadiganta.com/rajshahi/330190/কোটা-আন্দোলন-দমনে-আগ্রাসী-ভূমিকায়-রাবি-ছাত্রলীগ
- হাতুড়ি মামুনের নেই কোনো অনুশোচনা, ডয়চে ভেলে বাংলা, ১১ জুলাই ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৯ জুলাই ২০২৪ রাত ২২.১৫ এ সংগৃহীত, dw.com/bn/হাতুড়ি-মামুনের-নেই-কোনো-অনুশোচনা/a-44626654
- কোটা সংস্কার আন্দোলন: দূতাবাসগুলোর বিবৃতির অর্থ কী?, বিবিসি বাংলা, ১১ জুলাই ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৯ জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যা ১৯.০০ এ সংগৃহীত, com/bengali/news-44790226
- দায় নেবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসূচিতে আবারও বাধা, দৈনিক প্রথম আলো, ছাপা সংস্করণ, ০৫ জুলাই ২০১৮, ১ম পাতা
- সফিউল কমিটির সুপারিশ ছিল কোটা বাতিলের, দৈনিক দেশ রূপান্তর, অনলাইন সংস্করণ, ০৮ জুলাই ২০২৪, নিচের লিংক থেকে ২৯ জুলাই রাত ২২.৪০ এ সংগৃহীত, deshrupantor.com/521567/
- ঢাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর আবারও হামলা, বাংলা ট্রিবিউন, ১৫ জুলাই ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৯ জুলাই ২০২৪ রাত ২৩.০০ এ সংগৃহীত, banglatribune.com/educations/343445/
- আন্দোলনকারীদের ওপর ফের ছাত্রলীগের হামলা, দৈনিক যুগান্তর, ছাপা সংস্করণ, ২৩ জুলাই ২০১৮, ১ম পাতা
- ‘কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রলীগকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী’, দি ডেইলি স্টার বাংলা, ২২ জুলাই ২০১৮, নিচের লিংক থেকে ২৯ জুলাই ২০২৪ রাত ২৩.১০ এ সংগৃহীত, bangla.thedailystar.net/node/95821
লেখক পরিচিতি
আনিস রায়হান একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক, গবেষক ও লেখক। ফ্যাসিবাদি শাসন ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের সরব সমালোচক। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গবেষণা এবং ইতিহাস ও রাজনীতি অধ্যয়ন তার কাজের মূল এলাকা। যোগাযোগ: raihananis87@gmail.com, ০১৭৩২ ৭২৯০২৭
আপনার মতামত জানানঃ