জাপান সবসময়ই প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে। দৈনন্দিন জীবনের নানা খুঁটিনাটি কাজকে সহজ করে তোলার পাশাপাশি দেশটি বারবার চমকে দিয়েছে অভিনব সমাধান দিয়ে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যস্ত রাস্তাঘাট ও জনাকীর্ণ রেলস্টেশনগুলোতে মানুষের হাঁটার পদক্ষেপ থেকেই তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে পায়োজোইলেকট্রিক টাইলস নামের এক অনন্য প্রযুক্তির মাধ্যমে।
প্রতিটি পদক্ষেপ যখন টাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, তখন তা যান্ত্রিক শক্তিকে রূপান্তরিত করে বিদ্যুতে। এই ধারণা একেবারেই নতুন নয়। ১৯ শতকের শেষ ভাগে কিউরি ভাইয়েরা প্রথম দেখিয়েছিলেন, কোয়ার্টজ বা টোপাজের মতো নির্দিষ্ট উপাদানে চাপ প্রয়োগ করলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। একই প্রযুক্তি আজ ব্যবহৃত হচ্ছে ঘড়ি, রান্নার লাইটার এমনকি হাঁটার টাইলসেও।
২০০৮ সালে প্রথম যখন এই উদ্যোগ শুরু হয়, তখন একবারের চাপে উৎপন্ন হতো মাত্র ০.১ ওয়াট বিদ্যুৎ। এখন প্রযুক্তির উন্নতির কারণে একেকটি পদক্ষেপ থেকে উৎপন্ন হচ্ছে প্রায় ৩০ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ। একেকটি পদক্ষেপ হয়তো খুব সামান্য শক্তি তৈরি করে, কিন্তু লাখো মানুষের ভিড়ে এই শক্তি জমা হয়ে হয়ে দাঁড়াচ্ছে এক বিশাল সম্ভাবনা। টোকিওর শিনজুকু স্টেশনের মতো জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। এমন জায়গাগুলোই পরিণত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কার্যকর উৎসে।
তবে এর ব্যবহার এখনো সীমিত। দুটি বড় কারণ এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমত, খরচ। একটি টাইল বসাতে গড়ে ৫০ থেকে ১০০ ডলার লাগে। ফলে বড় এলাকায় এই টাইল বসাতে হলে বিশাল অঙ্কের প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, উৎপাদনের পরিমাণ তুলনামূলক কম। নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যান্য উৎস যেমন সৌরশক্তি অনেক সস্তায় বেশি বিদ্যুৎ দেয়। তাই কম জনবহুল এলাকায় এই প্রযুক্তি কার্যকর নয়।
অন্যদিকে ব্যস্ত এলাকায় টাইলের ওপর চাপ এত বেশি যে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। রক্ষণাবেক্ষণের খরচও তাই বেড়ে যায়। তবে গবেষকরা বলছেন, উন্নতমানের মজবুত টাইল তৈরি করা গেলে ব্যস্ত জায়গাগুলোতে এটি হতে পারে একটি অর্থনৈতিকভাবে টেকসই সমাধান। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মিসরের একটি ব্যস্ত স্টেশনে পুরো আয়ুষ্কালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ প্রায় ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
সব মিলিয়ে, এখনো সীমাবদ্ধতা থাকলেও জাপানের এই উদ্যোগ নবায়নযোগ্য শক্তির দুনিয়ায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। লাখো মানুষের প্রতিদিনের পদচিহ্ন ভবিষ্যতে একদিন শহরের বাতি জ্বালানোর শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ