
ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দ্বিতীয় তলার নারী ব্যারাকে ঢুকে একই থানায় কর্মরত কনস্টেবল সাফিউর রহমানের বিরুদ্ধে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে গত ছয় মাস ধরে থানা ব্যারাকেই তাকে বারবার ধর্ষণ করেছেন অভিযুক্ত। এ ঘটনায় থানায় মামলা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী। অভিযোগ উঠেছে—ওসি থেকে শুরু করে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রতিকার না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য।
ভুক্তভোগী জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যোগদান করার পর থেকেই সাফিউর রহমান তার সঙ্গে পরিচিত হন। গত রমজানে ঈদের পর এক রাতে তিনি ডিউটিতে না থাকায় একা ব্যারাকে ছিলেন। হঠাৎ সাফিউর কক্ষে ঢুকে তাকে জাপটে ধরেন এবং ধর্ষণ করেন। একইসঙ্গে ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য, “চাকরির ভয়, লজ্জা আর সামাজিক হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় কাউকে কিছু জানাইনি। কিন্তু নীরবতার সুযোগ নিয়েছে সাফিউর। ভিডিওর ভয় দেখিয়ে বারবার আমাকে ধর্ষণ করেছে।”
গত ১৫ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকেও তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখালেও শারীরিক সম্পর্কে বাধা দিলে তাকে মারধর করা হতো। ভুক্তভোগীর কাছে এ সংক্রান্ত ছবি ও প্রমাণও রয়েছে বলে তিনি জানান।
১৬ আগস্ট বিষয়টি থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ইবনে ফরহাদকে গোপনে জানালেও উল্টো খবর পৌঁছে যায় ওসি তদন্ত আল-আমিন হোসেনের কাছে। ভুক্তভোগীর দাবি, ওসি তদন্ত অভিযুক্ত সাফিউরের গ্রামের বাড়ির লোক হওয়ায় শুরু থেকেই তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
পরের দিন থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিতে গেলেও ওসি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান। বরং মীমাংসার নামে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব আসে। এদিকে প্রমাণস্বরূপ তার কক্ষ থেকে জামাকাপড় সরিয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটে।
অবশেষে ভুক্তভোগী এসপি অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে সাফিউর প্রথমে বিয়ের কথা বললেও পরে দাবি করেন, তিনি ভুক্তভোগীকে চেনেন না। এমনকি আরেক নারী কনস্টেবলকে হাজির করে তাকে স্ত্রী বলে পরিচয় করানোর চেষ্টা করেন। তবে কোনো সরকারি অনুমতি ছাড়া বিয়ে করার বিষয়টি উত্থাপিত হলে তারা কোনো জবাব দিতে পারেননি।
অভিযুক্ত কনস্টেবল সাফিউর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। থানার ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন বলেন, “আমার কাছে ভুক্তভোগী কোনো অভিযোগ করেননি। বিষয়টি এসপি স্যার দেখছেন।”
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান বলেন, “পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। থানা ব্যারাকে এমন ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। তদন্ত চলছে। প্রেমঘটিত কিনা কিংবা কাউকে ফাঁসানো হচ্ছে কিনা—সবই দেখা হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একজন নারী পুলিশ সদস্যের অভিযোগ—নিজ থানার ব্যারাকে দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হলেও মামলা করতে পারেননি। বরং ধামাচাপার চেষ্টা হয়েছে। এমন অভিযোগ শুধু পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং ভুক্তভোগী নারী সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।
আপনার মতামত জানানঃ