পিপিআরসির গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে গত তিন বছরে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যের নিচে বসবাস করছে। ২০২২ সালে সরকারি হিসাবে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২৫ সালের মে মাসে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে। এর মানে হলো, প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি মানুষ এখন গরিব। শুধু তাই নয়, দেশের ১৮ শতাংশ পরিবার হঠাৎ কোনো সংকট যেমন অসুস্থতা, দুর্ঘটনা বা আয়ের হ্রাসের কারণে যেকোনো সময় দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
চরম দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে। অর্থাৎ ন্যূনতম খাবার ও মৌলিক চাহিদা মেটাতেও যারা অক্ষম, তাদের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। বিবিএসের জনশুমারি অনুযায়ী ২০২২ সালে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ এবং পরিবারের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১০ লাখ। এই হিসাবে এখন কমপক্ষে চার কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে।
গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে ৮ হাজার ৬৭টি পরিবার ও ৩৩ হাজার ২০৭ জন মানুষের ওপর। এর সঙ্গে ২০২২ সালের বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়েছে, যেখানে ১৪ হাজার ৪০০ পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই গবেষণায় দারিদ্র্য মাপার মানদণ্ড ছিল একজন মানুষের দৈনিক গড়ে ২,১২২ ক্যালরি খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খরচ মেটাতে প্রয়োজনীয় আয়। আয় যদি এর চেয়ে কম হয়, তবে সেই পরিবারকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ধরা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনা মহামারি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা একসঙ্গে এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। খাবার, বাসাভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা—প্রতিটি খাতেই ব্যয় বেড়েছে। এর ফলে শুধু দরিদ্র নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিও সংকটে পড়েছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছেন।
গবেষণা প্রকাশের সময় পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সরকার এখন সামষ্টিক অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দিলেও জনমুখী দৃষ্টি রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি বৃদ্ধির হিসাব নয়, বরং সমতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীনতা এবং নাগরিক কল্যাণের দিকেও নজর দিতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান মানুষের মধ্যে আশা জাগালেও নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, যা দারিদ্র্যের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
আপনার মতামত জানানঃ