ভারত সাম্প্রতিক সময়ে এক জটিল ভূরাজনৈতিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনা অব্যাহত রাখার কারণে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক চাপিয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও কঠোর পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। তবুও মস্কো সফরে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে গত চার বছরে ভারত-রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পাঁচগুণ বেড়ে ১৩০০ কোটি ডলার থেকে ৬৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যদিও এই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় নয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতের যুক্তি হলো তাদের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মতো কর্মসূচি, নগরায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাড়তি ভোগের চাহিদা রাশিয়ার মতো অংশীদারদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে বলেছেন যে রাশিয়ার সংস্থাগুলি যদি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়, তবে তা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপ ভারতকে নতুন চাপে ফেলেছে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি প্রকাশ্যে বলেছেন, যদি পুতিনের সঙ্গে সমঝোতা না হয় তবে ভারতের ওপর শুল্ক আরও বাড়ানো হবে এবং এ নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপীয় দেশগুলোকেও যুক্ত হওয়া উচিত। ভারতীয় বিশ্লেষকরা এটিকে সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছেন। অনেকের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে রাশিয়ার কাছে ভারতের বিশেষ প্রভাব আছে, তাই ভারতকে চাপ দিয়ে পুতিনকে দুর্বল করা যেতে পারে। এতে ভারত ‘পাঞ্চিং ব্যাগে’ পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত শুধু রাশিয়ার সঙ্গে নয়, চীনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের শীর্ষ নেতৃত্ব চীনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক ইতিবাচক বৈঠক করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বাইরে বিকল্প মঞ্চে সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে দিল্লি তাদের কৌশলগত পরিসর বিস্তৃত করতে চাইছে।
ফলে ভারতের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অপরিহার্য, কিন্তু সস্তা জ্বালানি ও অপরিহার্য পণ্যের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা ছাড়া উপায় নেই। একই সময়ে সীমান্ত দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে চীনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ভারত একদিকে মার্কিন চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে—যা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ