প্রায় আশি বছর আগেকার কলকাতা ও নোয়াখালী দাঙ্গা আবারও সামনে চলে এসেছে এক বলিউড ছবিকে ঘিরে। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর নতুন ছবি দ্য বেঙ্গল ফাইলস মুক্তির আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গ এবং সারা ভারতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
অগ্নিহোত্রী গত এক মাস ধরে টুইটার ও ফেসবুকে ১৯৪৬ সালের নোয়াখালীর দাঙ্গার নানা বিতর্কিত বর্ণনা তুলে ধরছেন। তার দাবি, দেশভাগের আগের এই হত্যাযজ্ঞ ও কলকাতার ভয়াবহ দাঙ্গার ইতিহাসই সিনেমার মূল প্রেক্ষাপট। এই প্রচারণা চলচ্চিত্রটির মুক্তিকে ঘিরে জনমনে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে, ছবিটি রাজ্যের কোনও সিনেমা হলে প্রদর্শন করা যাবে না। তাদের যুক্তি—এটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। এমনকি কলকাতায় ছবির ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানও শেষ মুহূর্তে বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন বিজেপি ছবিটিকে সব রকমভাবে সমর্থন করছে। তাদের দাবি, দেশভাগের সময় বাংলার হিন্দুদের ওপর যে ভয়াবহ নির্যাতন হয়েছিল, তা প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। বিজেপি নেতারা ছবিটিকে ইতিহাসের সত্য প্রকাশ হিসেবে তুলে ধরছেন।
ছবির ট্রেলারে দেখা গেছে, কলকাতার দাঙ্গার সময়কার চরিত্র গোপাল পাঁঠাকে হিন্দুদের রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তার উত্তরসূরিদের অভিযোগ, তিনি মুসলিমদেরও প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন, অথচ ছবিতে তাকে মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, অগ্নিহোত্রীর আগের কাজগুলোর মতো এখানেও ইতিহাস বিকৃতির ঝুঁকি প্রবল।
অভিনেতা সৌরভ দাস জানিয়েছেন, তিনি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন যখন এটি দিল্লি ফাইলস নামে পরিচিত ছিল। পুরো কাহিনি তার জানা ছিল না। অন্যদিকে অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ইতিহাস যাচাই তার দায়িত্ব নয়, দর্শক ও আদালতই প্রকৃত বিচার করবে।
ভারতে মুক্তির আগে ছবিটি আমেরিকার বিভিন্ন শহরে প্রদর্শিত হয়েছে এবং দর্শকদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এমনকি ভারতীয় কূটনীতিকরাও প্রিমিয়ারে উপস্থিত ছিলেন। অগ্নিহোত্রীর আগের ছবি দ্য কাশ্মীর ফাইলস এর মতোই এবারও সরকারপক্ষীয় সমর্থনের অভিযোগ উঠেছে।
সমালোচকরা ছবিটিকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বললেও, অনেকের মতে একটি গণতান্ত্রিক দেশে সিনেমাকে সেন্সর করার বদলে দর্শকদের হাতেই বিচার ছেড়ে দেওয়া উচিত। কেউ কেউ আবার মনে করেন, বাংলার মতো সংবেদনশীল রাজ্যে এ ধরনের কাহিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে।
দ্য বেঙ্গল ফাইলস এখনও মুক্তি পায়নি, কিন্তু ইতিমধ্যেই ইতিহাস, রাজনীতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাম্প্রদায়িক সংবেদনশীলতার প্রশ্নে এটি এক অভূতপূর্ব বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইতিহাসের বর্ণনা নাকি রাজনৈতিক প্রচার—দর্শকের চোখেই তার চূড়ান্ত রায় নির্ভর করছে।
আপনার মতামত জানানঃ