বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে এবং এর বড় অংশজুড়ে রয়েছে মোটরসাইকেল আরোহীরা। বিআরটিএর হিসাবে গত ১৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫ হাজার ৫৯৫ জন। এদের মধ্যে এক হাজার ৭৯৮ জনই মোটরসাইকেল আরোহী, যা মোট নিহতের প্রায় ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি তিনজন নিহতের একজনই মোটরসাইকেলে ছিলেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ১১ হাজার ৮০০ জনের বেশি ছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী, যা মোট প্রাণহানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। শুধু তাই নয়, এই সময়কালে মারা যাওয়া শিশুদের ক্ষেত্রেও চিত্র ভয়াবহ— প্রায় ৪ হাজার ৮০০ শিশুর মধ্যে ১ হাজার ৫৮৫ জন মোটরসাইকেলের আরোহী ছিল।
অর্থাৎ দেশের সড়কে যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ এখন মোটরসাইকেল আরোহী। এই প্রবণতা স্পষ্ট করছে যে মোটরসাইকেল এখন শুধু জনপ্রিয় যান নয়, বরং প্রাণহানির অন্যতম বড় কারণ।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং এর একটি বড় অংশই মোটরসাইকেল আরোহী। এর পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, চালকদের একটি বড় অংশের বৈধ লাইসেন্স নেই। বিআরটিএর তথ্য বলছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রায় ৮০ শতাংশ চালকের কোনো লাইসেন্স ছিল না। এতে বোঝা যায় যে প্রশিক্ষণহীন চালকরা সড়কে নেমে আসছেন এবং নিজের অজ্ঞতা বা অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনায় পড়ছেন। দ্বিতীয়ত, হেলমেট ব্যবহার না করাও মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় চালক ও আরোহীরা হেলমেট ব্যবহার করতে চান না, ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে মাথায় গুরুতর আঘাত লেগে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। তৃতীয়ত, মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। গণপরিবহন সহজলভ্য না হওয়ায় তরুণরা মোটরসাইকেলকে দ্রুত চলাচলের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন, কিন্তু অনেকে অতিরিক্ত গতিতে কিংবা প্রতিযোগিতামূলকভাবে চালান, যা দুর্ঘটনা ডেকে আনে।
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি। প্রথমেই নিবন্ধন ও লাইসেন্সের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ যেন মোটরসাইকেল চালাতে না পারে, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো দরকার। হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান চালানো উচিত। তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা কার্যক্রম চালাতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারেন যে একটি ছোট ভুল তাদের জীবন কেড়ে নিতে পারে। পাশাপাশি গণপরিবহন সহজলভ্য ও নিরাপদ করতে হবে, যাতে মানুষ মোটরসাইকেলের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর না করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার প্রসার ঘটানোই দীর্ঘমেয়াদে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমানোর কার্যকর উপায় হতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ