ভারতীয় পেঁয়াজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশি ক্রেতারা। পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য রাজনীতির কারণে বাংলাদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ভারতের পেঁয়াজের বাজারের প্রতি বাংলাদেশের ক্রেতাদের যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া পড়েছে পেঁয়াজের বাজারে। ক্রেতারা ভারতীয় পেঁয়াজের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিরব প্রতিবাদ জানাচ্ছে ভারতীয় অপ্রতিবেশি সূলত আচরণের। যার ফলে অনেক দিন ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ রাখার পর ছাড় দিলেও ক্রেতার অভাবে আমদানীকারকরা ভারতীয় পেঁয়াজ ছাড় করাচ্ছেন না স্থল বন্দরগুলো থেকে।
আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ায় এবং দেশের বাজারে আমদানি করা পিঁয়াজের দামের তুলনায় দেশি পিঁয়াজের দাম কম থাকায় ও ভারতীয় পিঁয়াজের চাহিদা না থাকায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পিঁয়াজ আনছেন না আমদানিকারকরা। ২ জানুয়ারি থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পিঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও ১৩ জানুয়ারি থেকে ভারতীয় পিঁয়াজ আনছেন না আমদানিকারকরা। গত ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি বন্দর দিয়ে কোনও পিঁয়াজ আমদানি হয়নি।
বর্তমানে বাজারে ভারতীয় পিঁয়াজের ও দেশীয় পিঁয়াজের দাম প্রায় একই, অনেকক্ষেত্রে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম দেশি পেঁয়াজের তুলনায় বেশি। ভারতীয় পিঁয়াজের চাইতে দেশীয় পিঁয়াজের স্বাদ ও মান ভালো হওয়ায় দেশী পিঁয়াজ কেনাই ভাল বলে মনে করছেন ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই।
গুণগত মান ও স্বাদ বেশি হওয়ায় সবসময়ই বাজারে দেশীয় পিঁয়াজের চাহিদা বেশি। এরপরও ভারত থেকে আমদানি করা পিঁয়াজের দাম কম থাকায় সাধারণত বাধ্য হয়েই ভারতীয় পেঁয়াজ কেনেন ক্রেতারা। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে দেশীয় পেঁয়াজের দাম কম থাকায় ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছেন না ক্রেতারা। এ জন্য হিলি বন্দর থেকে আমদানীকারকরা আর পেঁয়াজ ছাড় করাচ্ছেন না।
হিলি ও বেনাপোল স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় ও দেশি পিঁয়াজের মধ্যে ৫ থেকে ১০ টাকা পার্থক্য থাকলে দেশে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা থাকে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০টাকা কেজি, অপরদিকে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজও একই দামে বিক্রি হচ্ছিলো। কিন্তু ৭ জানুয়ারি থেকে সরকার পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়ায় বর্তমানে ভারতীয় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩৫টাকা থেকে ৩৭ টাকার মতো পড়ছে। কিন্তু বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩১ টাকা কেজি দরে। এতে আমদানি করা পেঁয়াজে কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বাজার জরীপে দেখা যাচ্ছে, দেশের বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ভারতীয় পেঁয়াজের তেমন চাহিদা নেই। বর্তমান অবস্থায় পেঁয়াজ আমদানি করে কম দামে বিক্রি করতে হবে বলে লোকসানের আশঙ্কায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারকরা। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত হিলিস্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র ৬০০ টন। বিশেষজ্ঞমহলের অভিমত, ভারতীয় পেঁয়াজের উপর ক্রেতাদের মধ্যে একধরণের অনীহা কাজ করার কারণেও বাজারে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। কৃষকরা নায্যমূল্যে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশের যে ঘাটতি আছে তা কয়েক মৌসুমের মধ্যে অধিক চাষে পূরণ করা সম্ভব। প্রয়োজনে কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকদের সরাসরি সরকারী প্রণোদনা দিয়ে পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের উৎসাহ প্রদান করার মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছেন।
এসডব্লিউ/নসদ/১১৪৫
আপনার মতামত জানানঃ