রাশিয়ার দূর-পূর্বাঞ্চলে একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে এবং উদ্ধারকর্মীরা এখনো জীবিত কাউকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্মকর্তারা।
সাইবেরিয়া-ভিত্তিক আঙ্গারা এয়ারলাইন্স পরিচালিত এই ফ্লাইটটি বৃহস্পতিবার রাডার থেকে উধাও হয়ে যায় এবং চীনের সীমান্তঘেঁষা আমুর অঞ্চলের প্রত্যন্ত শহর টিন্ডায় অবতরণের সময় এটিসি’র (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার) সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে স্থানীয় জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, একটি আকাশ পর্যবেক্ষণে বিমানের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে কোনো জীবিত ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। তবে তারা জানিয়েছে, স্থলপথে অনুসন্ধানের সময় কেউ জীবিত পাওয়া যেতে পারে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টিন্ডা বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল) দূরে এক পাহাড়ি এলাকার জঙ্গলে বিমানের পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
রাশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঘন জঙ্গলের মধ্যে থেকে কালো ধোঁয়া উঠে আসছে, যা সম্ভবত দুর্ঘটনাস্থল।
আঞ্চলিক গভর্নর ভ্যাসিলি ওরলোভ জানিয়েছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বিমানে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে ৫টি শিশু ছিল, এবং ৬ জন ক্রু সদস্য ছিলেন।
তিনি টেলিগ্রামে লিখেছেন, “বিমানের খোঁজে প্রয়োজনীয় সব বাহিনী ও সরঞ্জাম মোতায়েন করা হয়েছে।”
রাশিয়ার পরিবহন তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, বিমান দুর্ঘটনার পেছনে যান্ত্রিক ত্রুটি ও মানবিক ভুল – দুই সম্ভাবনাই বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটি ছিল আন-২৪ মডেলের, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের আন্তোনভ ডিজাইন ব্যুরো ১৯৫০-এর দশকে তৈরি করেছিল। এই বিমানগুলো সাধারণত কঠিন পরিবেশে অবতরণে সক্ষম এবং দুর্গম অঞ্চলে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। আঙ্গারা এয়ারলাইন্সের যে আন-২৪ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটি ১৯৭৬ সালে নির্মিত – অর্থাৎ সেটির বয়স ৫০ বছরেরও বেশি।
এই দুর্ঘটনা রাশিয়ায় ২০২১ সালের জুলাইয়ের পর প্রথম প্রাণঘাতী যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনা। ওই সময় পেট্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি এয়ারের একটি আন-২৬ বিমান পালানা শহরের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে ২৮ জনের সবাই নিহত হন।
তবে ২০২২ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আগ্রাসনের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বিমান খাত কঠিন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এতে অনেক বিদেশি বিমান জব্দ হয়, এবং যন্ত্রাংশের আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাশিয়ায় যাত্রীবাহী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা বেড়ে গেছে।
পুরনো সোভিয়েত বিমান এবং আধুনিক বোয়িং ও এয়ারবাসের বিকল্প হিসেবে রাশিয়া এখনো নিজস্ব বিমান তৈরি করে পুরো চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ