দীর্ঘ সাড়ে তিনমাস পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার পর অবশেষে গত পহেলা জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। কিন্তু ততদিনে বাংলাদেশে উৎপাদিত পেঁয়াজও বাজারে চলে এসেছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের দরে ধস নেমে যায়। তাই সরকার একদিকে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে, অন্যদিকে আমদানির অনুমোদন (আইপি) না দেওয়ার কথা ভাবছে। গতকাল রোববার(০৩ জানু) বিকেলে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
গত বছরের আগস্ট মাসে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজ সংকটে পড়ে দেশ। তখন অন্য দেশ থেকে আমদানি সহজ করতে পেঁয়াজের ওপর ধার্য ৫ শতাংশ শুল্ক মুক্ত করে দেয় সরকার। এখন পেঁয়াজ আমদানিতে আবারও ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগের মতো ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজ সংকটে পড়ে দেশ। তখন অন্য দেশ থেকে আমদানি সহজ করতে পেঁয়াজের ওপর ধার্য্য ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে সরকার। তবে সেটি আবারও আরোপ করা হবে।
তিনি বলেন, ভারত তার স্বার্থের কথা ভেবে কখনও কখনও পেঁয়াজ ছাড় করে, আবারও হুট করে বন্ধও করে দেয়। এখন আবার তারা রপ্তানি শুরু করেছে। আমরা দেশের কৃষকদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করব। ভোক্তারা যাতে কোনো সংকটে না পড়ে সেটাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই যাতে উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাদের সাপোর্ট না দিলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরও খারাপ অবস্থা হবে।
পেঁয়াজের নতুন মৌসুম শুরু হলে ভারত এতদিন ধরে চলতে থাকা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা গত সপ্তাহে তুলে নেয়। গত দু’দিন ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসাও শুরু হয়। আমদানির প্রভাব দেশের বাজারেও পড়তে শুরু করে। মোকামগুলোতে প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজের দাম ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে ২১ থেকে ২৪ টাকা কেজি দরে ভারত থেকে আসছে পেঁয়াজ। হিলি স্থলবন্দরে রোববার পাইকারি দর ছিল ২৭ থেকে ৩০ টাকা। অন্যদিকে রাজধানীর বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও আমদানি পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে দ্রুত দাম কমে যাওয়ায় প্রেক্ষাপটে মৌসুমের এ সময় কৃষকের ন্যায্য দর পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টি সামনে চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেন। পরে বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে প্রস্তাব দেন।
এদিকে কৃষকের স্বার্থরক্ষায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন (আইপি) দেবে না সরকার। যেসব আইপি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মেয়াদও বাড়াবে না। তবে বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলমান আইপির বিপরীতে আমদানি করা পেঁয়াজের বড় অংশ সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি কিনে নেবে।
কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অনুমোদন নিতে হয়। একটি আইপির মেয়াদ থাকে চার মাস, পরে আরও দুই মাস বাড়ানো যায়। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রায় সাড়ে তিন মাস পর গত ২৮ ডিসেম্বর এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় দেশটি। এরপর গত শনিবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তবে গত দুদিন যেসব পেঁয়াজ এসেছে, তা আগেই দেওয়া আইপির অধীনে এবং জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ থাকা এসব আইপির বিপরীতে ছয় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি বাকি রয়েছে। কিন্তু ভারতে বর্তমানে পেঁয়াজ সংকট থাকায় সর্বোচ্চ এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ডিএই কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আইপির মেয়াদ শেষে আরও দুই মাস বাড়ানো যায়। কিন্তু কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। যারা পেঁয়াজ আমদানি করতে চাইছেন, তারা আগের আইপি দিয়ে মেয়াদ থাকাকালীন ঋণপত্র (এলসি) খুলে করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কৃষি প্রধান দেশ হয়েও কৃষিপণ্যের জন্য দেশকে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়াটা লজ্জাজনক। এতে সরকারের গাফিলতি, পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনাকে দায়ি করেন তারা। সরকারের যথাযথ তদারকি এবং পরিকল্পনা থাকলে দেশ পেঁয়াজ উৎপাদন এবং যোগানে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। তবে কৃষক এবং ভোক্তাদের কথা ভেবে সরকারের নেওয়া এসব সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তারা মনে করেন এতোদিনে সরকারের সুমতি ফিরেছে। দেশের কৃষক এবং কৃষিপণ্যে দেশকে স্বনির্ভর করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারকে সুদূরপ্রসারী আরো পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শও দেন তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৫
আপনার মতামত জানানঃ