করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানোর প্রধান একটি শর্ত হলো বাসার বাইরে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। কারণ, এটি একদিকে নিজের ও একই সঙ্গে অন্যদের সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমরা অনেকেই এই নিয়ম মানতে চাই না। মনে করি, নিজের যখন করোনা নেই, আশপাশের লোকজনের যখন খুব বেশি করোনা নেই, তাহলে কেন কষ্ট করে মাস্ক পরব? আসলে বিচ্ছিন্নভাবে দু–একজন মাস্ক পরলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। করোনার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে বাইরে চলাফেরার সময় সবার মুখে মাস্ক থাকতে হবে। না হলে তেমন লাভ হবে না। আজকাল যে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে, তার একটি কারণ হতে পারে মাস্কের ব্যাপারে গণসচেতনতার অভাব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মহামারি ভাইরাস থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধিতে নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত মাস্ক ব্যবহারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক অসচেতন মানুষ নিয়ম ভেঙে মাস্ক ছাড়াই অফিস, আদালত, ধর্মীয় ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন। এতে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, অন্যদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাসা, অফিস, ধর্মীয় কিংবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এক যুগান্তকারী যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন ক্ষুদে বিজ্ঞানী রিয়াদ আহমেদ শিথিল। যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন, কোভিড-১৯ সেফটি ফেইস মাস্ক ডিটেকটিভ ইন ডোর।
যন্ত্রটির সু্বিধা হলো, ফেস মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে না কেউ। শুধু মুখে মাস্ক থাকলে একটি সবুজ বাতি জ্বলে উঠবে এবং দরজা খুলে যাবে। মাস্ক না থাকলে মাস্ক পরার অনুরোধ করা হবে। মাস্ক থাকলে প্রবেশকারীকে স্বাগতম জানাবে যন্ত্রটি।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী রিয়াদ আহমেদ শিথিল বলেন, ফেস মাস্ক ছাড়া কেউ কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে বাঁধা দিবে যন্ত্রটি। শুধুমাত্র মাস্ক থাকলে প্রবেশ করা যাবে। মাস্ক থাকলে একটি সবুজ বাতি জ্বলে উঠবে এবং দরজা খুলে যাবে। মাস্ক না থাকলে মাস্ক পড়ার অনুরোধ করা হবে। মাস্ক থাকলে প্রবেশকারীকে স্বাগতম জানানো হবে।
তিনি আরো বলেন, টাকার অভাবে আমার সফলতাগুলো ঝরে পড়ছে। সরকারি বা বে-সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নতুন কিছু উপহার দিতে চাই দেশবাসীকে।
শিথিলের মা শেলী খাতুন বলেন, খুব ছোট থেকেই বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা ভাবনা ওর। কিন্তু গরিব হওয়ায় সামনে অগ্রসর হতে পারিনি। কারো সহযোগিতা পেলে ভাল কিছু করবে শিথিল।
শিথিল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলাধীন পান্টি ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তার জন্ম পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা নজরুল ইসলাম কম্পিউটারে অনলাইন সার্ভিস করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মা শেলী খাতুন পেশায় একজন গৃহিণী।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শিথিল শুধু স্বপ্নবাজ ছেলে নয় বরং স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্বাসী। তিনি বিশ্বাস করেন অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাসই পারে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৪২তম বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেন শিথিল। পান্টি কলেজ থেকে অংশ নিয়ে ‘কোভিড-১৯ সেফটি ফেস মাস্ক ডিটেকটিভ ইন ডোর’ নামর এই যন্ত্রটি উপস্থাপনা করেন তিনি। বিচারে প্রথম স্থান অর্জন করে কলেজ। সময়োপযোগী আবিষ্কারের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে ভূয়সী প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের বিজ্ঞান মেলাতেও উপজেলায় ১ম ও জেলা পার্যয়ে ২য় হন শিথিল। সঠিক দিকনির্দেশনা আর অর্থাভাবে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করতে পারেনি সে।
শিথিল বলেন, ‘‘আমি ছোটবেলার থেকেই টেকনোলজি জাতীয় কাজ করতে ভালোবাসি। রোবটিস্ক নিয়েও কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আমি গত ২০১৯ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় একটি ইন্টারনেট কন্ট্রোল পিআই রোবট তৈরি করি। ওই রোবটটির কাজ ছিল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রোবটের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করা। যে সব দুগর্ম স্থানে মানুষ সহযে যেতে পারে না, সে সব স্থানে এটি সহজে পাঠানো যাবে ও সেই স্থানের সব তথ্য গ্রহণ করা।
আমার অনেক অগ্রগতি ছিল রোবটিস্ক নিয়ে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের মহামারিতে আমার পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই মূর্হুতে আমি কিছুটা আর্থিক সাহায্য পেলে আমার বাকি কাজগুলো শেষ করতে পারতাম।’’
আবিষ্কৃত এ যন্ত্র সময়োপযোগী ও কার্যকারী হলেও অর্থের অভাবে সামনের দিকে এগোতে পারছেন না এই যুবক। সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে করোনা মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন ব্যক্তিরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ