ইসরায়েলের বর্তমান পরিস্থিতি এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নীতিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক চলছে। প্রবন্ধটি মূলত তুলে ধরছে—নেতানিয়াহুর নীতি কীভাবে শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, বরং ইসরায়েলের নিজের ভবিষ্যৎকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রোসেত্তোর বক্তব্য এই প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি সরাসরি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোনোভাবেই নিরীহ মানুষ হত্যার অজুহাত হতে পারে না। তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যা নেতানিয়াহুকে থামতে বাধ্য করবে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক অবস্থান টিকিয়ে রাখতে চাইছেন, যা আসলে চরমপন্থী মন্ত্রীদের হাতকে শক্তিশালী করছে। তাঁদের অনেকেই প্রকাশ্যে গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার আহ্বান জানাচ্ছেন। দুর্ভিক্ষ, বাস্তুচ্যুতি—এসব তাঁদের কাছে “লক্ষ্য অর্জনের উপায়।”
গাজার পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, উত্তর গাজায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছেন। ইসরায়েল যে “মানবিক শহর” নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল, তা আসলে ছিল গাজাবাসীদের জোর করে সীমাবদ্ধ জায়গায় আটকে রাখার কৌশল। আগস্টে গাজা সিটি দখলের পর আরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই অবস্থা শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ওপরও গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও ইসরায়েল এখন মারাত্মক চাপের মুখে। ঋণমান কমে যাচ্ছে, সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে, দক্ষ জনশক্তি দেশ ছাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের ওপর ‘টার্গেটেড’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, যা তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ার কারণে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে বড় আঘাত হানবে। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাত, যা গবেষণা তহবিলের ওপর নির্ভরশীল, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত কারণে ইসরায়েলকে কিছুটা সহায়তা করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই যুদ্ধ ইসরায়েলের অর্থনীতিকে দুর্বল করে ফেলবে।
এমন অবস্থায় ২৪ জন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, যাঁদের মধ্যে ১১ জন নোবেলজয়ী, খোলাচিঠিতে সতর্ক করেছেন যে, নেতানিয়াহুর নীতি ইসরায়েলকে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হয়ে পড়া, অর্থনৈতিক মন্দা, গণতন্ত্রের দুর্বলতা—সব মিলিয়ে ইসরায়েল নিজেই নিজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।
প্রবন্ধের মূল বার্তা হলো: নেতানিয়াহুর বর্তমান যুদ্ধনীতি ইসরায়েলের জন্য আত্মঘাতী। এখনই যদি নীতির দিক পরিবর্তন না হয়, তাহলে দেশটি রাজনৈতিকভাবে দুর্বল, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়বে।
আপনার মতামত জানানঃ