করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের উদ্বেগের শেষ নেই। কবে বিদায় হবে করোনা এমন প্রশ্ন অনেকের মুখেই। তবে ভাইরাসটির একের পর এক নতুন ভ্যারিয়েন্ট মানুষকে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। এর মধ্যেই আশার কথা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।
করোনা মহামারির গুরুতর পর্যায় চলতি বছরই বিদায় নেবে। তবে সে ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এ কথা বলেন।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গেব্রেয়াসুস বলেন, এই ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে আগামী জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে।
এ সময় টিকা কর্মসূচির ওপর জোর দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি বলেন, যদি ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়, তবে সত্যি মহামারির গুরুতর পর্যায় বিদায় নেবে এবং এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি।
আর এই টিকা কর্মসূচি আমাদের হাতে। এটা ঠিক সুযোগ নেওয়ার বিষয় নয়। এই টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করব কি না, সেটা আমাদের বেছে নেওয়ার বিষয়।
আফ্রিজেন বায়োলজিক অ্যান্ড ভ্যাকসিনেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান আরএনএ টিকা তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মডার্নার জিনবিন্যাস ব্যবহার করে। এই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি।
টিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই টিকার দাম কম হবে এবং কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই টিকা ভালো হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
এদিকে আফ্রিকায় তৈরি এই টিকা শেষ ধাপের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হবে আগামী নভেম্বরে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে এই টিকা অনুমোদন পাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বৈশ্বিক টিকা সরবরাহের উদ্যোগ কোভ্যাক্সের সহায়তায় যে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকা তৈরির কাজ করছে, সেগুলোর অন্যতম এই আফ্রিজেন। এই প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করতে আফ্রিকার ওষুধ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
করোনা সংক্রমণের আপডেট
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৪১ কোটি ছাড়িয়েছে। অপরদিকে ৫৮ লাখ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা।
সবশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৮ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কম। অর্থাৎ একদিনে নতুন করে কমেছে করোনা শনাক্ত।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় মারা গেছেন ৭ হাজার ৭১৮ জন। এনিয়ে মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ৫৮ লাখ ২৮ হাজার ৫৩১ জনে। আর এখন পর্যন্ত ৪১ কোটি ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৫৫৬ জনে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৩ কোটি ৭ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার আপডেট দেওয়া ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এর আগে শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওয়ার্ল্ডোমিটারস তথ্য দিয়েছিল, তখন করোনা সংক্রমিত হয়েছিল ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৮৩ জনে। আর ১০ হাজার ৮৬২ জন মারা গিয়েছিলেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৭৬৬ জনে। আর মারা গেছেন ৭২৯ জন।
এছাড়া দৈনিক শনাক্তের দিক দিয়ে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি। দেশটিতে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৮৭১ জনে। আর মৃত্যু হয়েছে ১২২ জনের।
অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। তবে করোনা শনাক্তের দিক দিয়ে লাতিন আমেরিকার এই দেশটি তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৯২ জন এবং নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ২২৮ জনে।
অন্যদিকে, দৈনিক মৃত্যুর হিসাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে একদিনে মারা গেছেন ৮৭৩ জন। আর নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৫৭৬ জনে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭ কোটি ৯২ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৪ জনে। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ লাখ ৪২ হাজার ৯৪৪ জনের।
এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত চার কোটি ২৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন পাঁচ লাখ আট হাজার ১২ জন। করোনায় মোট শনাক্তের দিক দিয়ে তালিকায় বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। তবে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়।
এদিকে বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯১ জনে। একই সময়ে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ২৩ জনে। দেশে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা হলো ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮২৬ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৪৫
আপনার মতামত জানানঃ