ইতালির জেনোয়া বন্দরে সৌদি আরবের একটি পণ্যবাহী জাহাজ আটক হওয়ার ঘটনাটি মধ্যপ্রাচ্যের গোপন সামরিক লেনদেন ও ভূরাজনৈতিক জটিলতার এক স্পষ্ট উদাহরণ। অভিযোগ অনুযায়ী, ‘বাহরি ইয়ানবু’ নামের জাহাজটি ইসরায়েলের জন্য লুকানো অস্ত্র বহন করছিল। ইতালির বন্দরের শ্রমিকরা জাহাজে উঠে পরিদর্শন করে এসব সামরিক সরঞ্জামের সন্ধান পান, যার মধ্যে ছিল ইতালির প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠান লিওনার্দোর তৈরি ওটো মেলারা কামান এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র। শ্রমিক সংগঠনগুলো স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা যুদ্ধের জন্য কাজ করবে না এবং এ ধরনের চালান খালাসে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। তাদের মতে, এই অস্ত্র ইসরায়েলের গাজায় চলমান যুদ্ধাপরাধে সহায়তার শামিল।
ঘটনাটি নতুন নয়। ২০১৯ সালেও একই জাহাজে অস্ত্র আটক হয়েছিল, এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন বন্দরে ইসরায়েলগামী অস্ত্র চালান আটকে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এই প্রতিরোধ কেবল মানবিক অবস্থান নয়, বরং গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের সরাসরি প্রতিক্রিয়া—যেখানে দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে শিশু, প্রাণ হারাচ্ছে।
সবচেয়ে বিতর্কিত দিক হলো সৌদি আরবের ভূমিকা। প্রকাশ্যে রিয়াদ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানালেও, গোপনে ইসরায়েলকে সহায়তার অভিযোগ বহুবার উঠেছে। ২০২৩ সালে সাবেক সৌদি গোয়েন্দা কর্নেল রাবিহ আল-আনজি স্বীকার করেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা অস্ত্র সংকট মোকাবিলায় রিয়াদ ইসরায়েলকে হামাসবিরোধী যুদ্ধে সাহায্য করেছে, আকাশসীমা উন্মুক্ত রেখেছে এবং ইরানি ড্রোন আটকাতেও সহায়তা দিয়েছে। যদিও সৌদি শিপিং কোম্পানি ‘বাহরি’ এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করছে এবং প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে, তবুও অতীতের ঘটনাগুলো তাদের অস্বীকৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এ ঘটনা শুধু এক বন্দরের শ্রমিকদের প্রতিবাদ নয়—এটি আন্তর্জাতিক নৈতিকতার প্রশ্ন। যখন রাষ্ট্রগুলো কূটনৈতিকভাবে নিরপেক্ষতার ভান করে কিন্তু গোপনে যুদ্ধের জ্বালানি সরবরাহ করে, তখন তা বৈশ্বিক মানবাধিকারের প্রতি এক নির্মম উপহাস হয়ে দাঁড়ায়। ইতালির জেনোয়া বন্দর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিরোধ হয়তো ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ, কিন্তু এটি প্রমাণ করে যে ন্যায়বোধ ও মানবিক অবস্থান এখনও কিছু মানুষের হাতে টিকে আছে, যদিও রাষ্ট্র ও কর্পোরেট স্বার্থ প্রায়ই সেটিকে আড়াল করার চেষ্টা করে।
আপনার মতামত জানানঃ