করোনা ভাইরাস নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন হল- আপনার কি দ্বিতীয়বার করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে? কেউ কেউ কেন এই সংক্রমণের ফলে অন্যের তুলনায় বেশি অসুস্থ হচ্ছে? প্রতি শীতে কি এই ভাইরাস ফিরে আসবে? ভ্যাকসিন কি কাজ করবে? ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠলে কি কাজে ফেরা যাবে? দীর্ঘ মেয়াদে এই ভাইরাসের মোকাবেলা আমরা কীভাবে করব?
তবে এই সমস্ত প্রশ্ন আর তার উত্তরকে একপ্রকার উড়িয়ে নতুন সংকটের জন্ম দিয়ে টানা ৭৮ বার করোনা পজিটিভ হলেন তুরস্কের এক ব্যক্তি। নাম মুজাফ্ফর কায়াসন। এর আগে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল ব্রাজিলে প্রায় তিনজন ব্যক্তি ৭১ দিন থেকে ২৩২ দিন পর্যন্ত কোভিড পজিটিভ থেকেছেন। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে একজন মানুষের শরীরে কতদিন বেঁচে থাকতে করোনাভাইরাস!
তবে টানা ৭৮ বার করোনা আক্রান্তের খবর সামনে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে। গবেষকরাও বিষয়টি বোঝার চেষ্টায় দিন-রাত এক করেছেন। টানা এত দিন সংক্রমিত থাকতে আর কাউকে দেখা যায়নি বলেই বক্তব্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ৭৮ বার পজিটিভ শনাক্ত হওয়া এই ব্যক্তির বয়স ৫৬ বছর। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ২০২০ সাল থেকে টানা ১৪ মাস আইসোলেশনে ছিলেন তুরস্কের নাগরিক মুজাফ্ফর কায়াসন।
তার মতো এত দীর্ঘসময় আর কাউকে করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকতে হয়নি বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। এই সময় মুজাফ্ফর হাসপাতাল ও বাড়িতে আইসোলেশনে কাটিয়েছেন।
লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত মুজাফ্ফরের ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। তারপর কিছুদিন হাসপাতালে কাটান। রোগের তীব্রতা কিছুটা কমলে ফিরে যান বাড়িতে।
সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় ইস্তানবুলের বাড়িতে আইসোলেশনে থাকেন তিনি। কিন্তু বিড়ম্বনার শুরুটা ছিল সেখানেই। এরপর একে একে কেটে গেছে মাস। কয়েক দিন পর পর করোনা পরীক্ষা করেছেন। প্রতিবার এসেছে ‘পজিটিভ’ রেজাল্ট।
সম্প্রতি বলা হচ্ছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে আইসোলেশন ছাড়া যাবে। কিন্তু মুজাফ্ফর যখন আক্রান্ত হন, তখন এ নিয়ম ছিল না। ইতোমধ্যে দফায় দফায় ৯ মাস হাসপাতালে কাটিয়েছেন তিনি। পাঁচ মাস কাটিয়েছেন বাড়িতে। পরীক্ষা করিয়েছেন মোট ৭৮ বার।
পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থেকে একা দিন যাপন করতে হচ্ছে উল্লেখ করে মুজাফ্ফর চিকিৎসকদের কাছে এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, লিউকোমিয়ার কারণে তার এ অবস্থা। মুজাফ্ফরের ইমিউনিটি সিস্টেম খুবই দুর্বল হয়ে গেছে। তাই তিনি পুনরায় সুস্থ হয়ে উঠতে পারছেন না।
মুজাফ্ফর বলেন, করোনা আমার সামাজিক জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি প্রিয়জনদের কাছে যেতে পারছি না, ছুঁয়ে দেখতে পারছি না। শরীরের দুরবস্থার কারণে আমি ভ্যাকসিনও গ্রহণ করতে পারিনি
এর আগে যে সমীক্ষা ব্রাজিলে করোনা আক্রান্তের নিয়ে হয়েছিল তাতে দেখা গিয়েছিল ৭১ দিন থেকে সর্বাধিক শরীরে ২৩২ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এই ভাইরাস। ২৩২ দিন যে ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল তিনি এইচআইভি পজিটিভ ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন গবেষকরা। আর এবার টানা ৭৮ বার করোনা পজিটিভ হলেন এই লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ৫৬ বছর বয়সী প্রৌঢ়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ