বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান সম্প্রতি দেওয়া এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক বিতর্কে পড়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে একদিকে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ করছে, অন্যদিকে তিনি নিজেকে প্রাণনাশের হুমকির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। ঢাকার হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে তাঁর কাছে হত্যার হুমকি পৌঁছাচ্ছে এবং এমনকি কয়েকজন তাঁর বাসার সামনে জড়ো হয়ে ভীতি সৃষ্টি করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাঁর মৃত্যু কি কারও কাম্য, আর এ ধরনের মব জাস্টিস কি গণতান্ত্রিক সমাজে সহ্য করা যায়।
ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ভাড়া বাসার সামনে সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘বিপ্লবী ছাত্র জনতা’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জুলাই রাজবন্দীসহ বেশ কিছু সংগঠনের নেতাকর্মী অংশ নেয়। তারা নানা স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ফজলুর রহমানের গ্রেফতার ও বিএনপি থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানায়। কিছু স্লোগানে তাঁকে হত্যারও আহ্বান শোনা যায়। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করে বলেন, তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন এবং শহীদদের স্মৃতিকে অসম্মান করেছেন। তাদের দাবি, ফজলুর রহমানকে ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যথায় তারা তাঁর বাসার সামনে অবস্থান চালিয়ে যাবে।
এই সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। প্রথমে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় বসে থেকে যানজট তৈরি করলেও পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে তারা রাস্তার একপাশে সরে দাঁড়ায়। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ফজলুর রহমানের পরিবার বিক্ষোভ শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তা বাহিনীকে খবর দেয়। বিকেল পর্যন্ত সেনা ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করে যাতে কোনো অঘটন না ঘটে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দল কখনোই মব রাজনীতি সমর্থন করে না। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাঁর বক্তব্য দলের নীতি ও গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত হবে তাঁর লিখিত জবাব পর্যালোচনা করে, এবং কোনোভাবেই বাহ্যিক চাপ বিএনপির সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারবে না।
ফজলুর রহমানের বিতর্কিত মন্তব্যে বলা হয়েছিল, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পেছনে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা ছিল এবং তিনি তাদেরকে “কালো শক্তি” বলে আখ্যা দেন। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ছাত্র আন্দোলনের কিছু সমন্বয়ক কেবল অভিনয় করে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তাঁর এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। তারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে এবং তাঁর কুশপুত্তলিকাও দাহ করে।
নিজের বক্তব্য প্রসঙ্গে ফজলুর রহমান জানান, তিনি দলের নির্দেশ মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নোটিশের জবাব দেবেন। তিনি বলেন, দলের যে সিদ্ধান্ত হবে সেটি তিনি মাথা পেতে মেনে নেবেন। তবে তাঁর দাবি, মতপ্রকাশের কারণে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া কিংবা মব তৈরি করে ভীতি প্রদর্শন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর অনুরোধ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর ও তাঁর পরিবারের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করুক।
আপনার মতামত জানানঃ