বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি গত বছরের ‘বর্ষাবিপ্লব’-এর পর থেকে ভারতের আতিথ্যে অবস্থান করছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন হাজার দুয়েক আওয়ামী নেতা–কর্মী। কলকাতার বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে কিংবা সংগঠিত হয়ে তাঁরা প্রতিদিন নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। কেউ আরামে দিন কাটাচ্ছেন, আবার কেউ—যেমন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত—রাতদিন এক করে চেষ্টা করছেন কীভাবে অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারকে সরিয়ে হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় ফেরা যায়।
ভারতের অনলাইন পোর্টাল দি প্রিন্ট এসব তথ্য প্রকাশ করেছে, যা প্রথম আলোতেও স্থান পেয়েছে। ইউটিউব ভিডিও এবং প্রতিবেদনগুলোতেও দেখা যায়, হাসিনার ঘনিষ্ঠজনেরা ভারতে আরাম–আয়েশের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিকল্পনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অথচ ভারতের সরকার সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, তারা এ ধরনের কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত নয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার উদ্বেগ জানানো হলেও দিল্লি সেই অভিযোগ খারিজ করেছে। তবে বাস্তবতা হলো, হাসিনা রাষ্ট্রীয় অতিথি মর্যাদায় ভারত সরকারের খরচে অবস্থান করছেন—খাবার, নিরাপত্তা, এমনকি টেলিফোন বিলের দায়িত্বও ভারতের।
ভারতের অভ্যন্তরেও প্রশ্ন উঠেছে। সর্বভারতীয় মজলিশ-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাবুদ্দিন ওয়াইসি প্রশ্ন তুলেছেন—যেখানে শুধু বাংলা বলার কারণে সাধারণ মানুষকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, সেখানে শেখ হাসিনাকে কেন এত বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় রাজনীতিকদের মতে, শেখ হাসিনার পতন মোদি সরকারের জন্য কূটনৈতিক ব্যর্থতা। দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ করা সম্পর্কের ফলাফলে ভারত নিজেও লাভবান হয়েছিল। ফলে হাসিনার পতনে শুধু তিনি নন, ভারতের কৌশলও বড় ধাক্কা খেয়েছে।
তবুও ভারত এখনো হাসিনাকে কৌশলগত সম্পদ বা স্ট্র্যাটেজিক লেভারেজ হিসেবে ধরে রাখতে চাইছে। তাঁদের মতে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনা ও আওয়ামী লীগ যদি একটি ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে টিকে থাকেন, তাহলে দিল্লি সেই অবস্থানকে দর–কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। ইতিহাসে ভারত এ ধরনের কৌশল প্রয়োগ করেছে—চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেওয়া কিংবা বালুচ বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার মতো উদাহরণ তার প্রমাণ।
তবে আশঙ্কার বিষয়, শুধু ‘কৌশলগত তাস’ হিসেবেই নয়, ভারত হয়তো বিশ্বাস করে হাসিনা একদিন সত্যিই ক্ষমতায় ফিরবেন। মোহাম্মদ আরাফাতসহ আওয়ামী সমর্থকেরা ইতোমধ্যে ভারতে বসেই সে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, কয়েকশ’ কর্মী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন। সবই ইঙ্গিত করছে, হাসিনার ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা কেবল থিওরি নয়, বরং বাস্তব চেষ্টাও চলছে।
বাংলাদেশে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা হয়েছে। নির্বাচনের পথ মসৃণভাবে সম্পন্ন হলে হাসিনার ফেরা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই তাঁর সমর্থকদের লক্ষ্য হবে এই নির্বাচন ঠেকানো। বাংলাদেশের জন্য এটি এক বড় পরীক্ষা—দেশের ভেতরে ও বাইরে সক্রিয় ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাওয়া কি সম্ভব হবে, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
আপনার মতামত জানানঃ