পশ্চিম আফ্রিকার মালি সীমান্তবর্তী দেশ নাইজারে প্রায়ই ইসলামি জিহাদিরা হামলা চালায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সবথেকে বড় জিহাদি আক্রমণ হয় গত রোববার (২১ মার্চ)। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় তাহোয়া অঞ্চলের একাধিক গ্রামে জিহাদিদের নৃশংস এ তাণ্ডবে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৩৭ গ্রামবাসী। সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, জিহাদি বাহিনীগুলোর নির্মম আক্রমণ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। খবর ডয়েচে ভেলে, রয়টার্স।
গত সোমবার(২২ মার্চ) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির মুখপাত্র জাকারিয়া আবদুর রহমানে বলেন, রোববার মালি সীমান্তে নাইজারের কয়েকটি গ্রামে জিহাদিদের হামলায় ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন।
এর আগে স্থানীয়দের বরাতে রোববার গণমাধ্যম জানায়, মৃতের সংখ্যা একশ’র কম। তবে সোমবার সরকারের পক্ষ থেকে প্রকৃত সংখ্যা জানানো হয়। একই সঙ্গে এ হামলাকে স্মরণকালের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলা বলে উল্লেখ করে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেন, রোববার জিহাদিরা ভারী অস্ত্রসহ মোটরবাইকযোগে ইন্তাজায়ান, বাকোরাত ও উইসটেন গ্রামে এসে হামলা চালায়। তারা সামনে যা কিছু নড়তে দেখেছে, তার ওপরই গুলি চালিয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালি সীমান্তের কাছের গ্রামগুলোতে জিহাদিরা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। গুলি চালানোর সময় তারা কোনো বাছবিচার করেনি। সরকার এই নৃশংসতার নিন্দা করছে। সরকারের মতে, যারা এই কাজ করছে, তাদের আইন বা কোনো ধর্মে বিশ্বাস নেই।
সরকারি টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির মুখপাত্র জাকারিয়া আবদুর রহমানে বলেন, এখন বেসামরিক লোকজনকে হত্যাকাণ্ডের শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। সশস্ত্র জিহাদিরা তাদের অভিযানকে আরও নৃশংসতা ও বীভৎসতার দিকে নিয়ে গেছে।
সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এমন বর্বর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
সম্প্রতি নাইজারের মালি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক হারে বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা। বর্তমানে নাইজারে দুটি জিহাদি গোষ্ঠী সক্রিয় আছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির সাংবিধানিক আদালত প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোহামেদ বাজৌমের নির্বাচনকে বৈধ ঘোষণা করে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই রোববার (২১ মার্চ) বিকেলে জিহাদিরা মালি সীমান্তের কাছাকাছি তিনটি গ্রামে সশস্ত্র তল্লাশি শুরু করে। তারা সেখানে সাধারণ মানুষকে জিম্মি ও গুলি করে হত্যা শুরু করে। দেশটির সামরিক বাহিনীর সৈন্যরা ওই এলাকায় পৌঁছালে জিহাদিদের সঙ্গে নাইজার সেনাদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এ অঞ্চলে সশস্ত্র জিহাদি সদস্যদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা হয়। রোববারের এ রক্তক্ষয়ী হামলা জিহাদি সদস্যদের গ্রেফতারের প্রতিশোধ হতে পারে। ইসলামিক স্টেট ইন দ্য গ্রেটার সাহারার (আইএসজিএস) সঙ্গে জড়িতরা ওই এলাকাগুলোয় তৎপরতা চালিয়ে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে মালির তিল্লিয়ারি সীমান্তে এই হামলার ঘটনাকে ‘বর্বরোচিত’ আখ্যায়িত করেছে দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মোহামাদু ইসৌফু। তিনি হতাহতদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, জঘন্য এসব অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে সবকিছুই করছে নাইজার সরকার।
গত সোমবার হামলা ও হতাহত হওয়ার তথ্য জানিয়ে নাইজার সরকারের মুখপাত্র জাকারিয়া আবদুরহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরকার নিরাপত্তা জোরদার করবে। কাপুরুষোচিত ও অপরাধমূলক এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনদিন জাতীয় শোক পালন করা হবে। ওই এলাকায় আরো নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানো হবে। যারা এই আক্রমণ করছে, তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।
নাইজারে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে। গত এক সপ্তাহে নাইজার-মালি সীমান্ত এলাকায় এমন হামলার ঘটনায় ২৩৬ জন নিহত হলো।
জাতিসংঘের উন্নয়ন সূচকের ১৮৯ দেশের মধ্যে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ নাইজার। মালি ও নাইজার সীমান্তে অধিবাসীদের জিহাদিদের হামলার ভয়ে তটস্থ থাকতে হচ্ছে। জিহাদিদের হামলায় সাবেক এই ফরাসি উপনিবেশে এখন পর্যন্ত শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। আর লাখ লাখ লোককে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/২২১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ