আবারও নাইজেরিয়ায় কারাগার থেকে বন্দি ছিনিয়ে নেওয়া হলো। এ বছরে দ্বিতীয় ঘটনা এটি। দেশটিতে এ দিন সশস্ত্র বন্দুকধারীদের হামলার পর ২৬৬ জন বন্দিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। দেশটির দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলীয় একটি কারাগারে এই ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এবিসি নিউজ।
হামলায় কারাগারের বেষ্টনি উড়ে যায় এবং প্রায় সব বন্দিই মুক্তি পায় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক পুলিশ কর্মকর্তা ও এক সেনা নিহত হওয়া ছাড়াও হামলার পর দুই পাহারাদারকে গুম করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণাল।
এবছর নাইজেরিয়ায় এটি কারাগারে হামলার দ্বিতীয় বড় ধরনের ঘটনা। এর আগে গত এপ্রিলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ওয়েরি কারাগারে বন্দুকধারীর হামলায় ১৮শ’র বেশি বন্দি মুক্তি পেয়েছিল।
নাইজেরীয় সরকারের এক মুখপাত্র জানান, দেশটির কোগি প্রদেশের কাব্বা এলাকার একটি কারাগারে গত রোববার রাতে হামলা করে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হামলাকারীরা।
একপর্যায়ে মধ্যম মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় থাকা ওই কারাগারে দায়িত্বপালনরত রক্ষীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয় হামলাকারীদের। কারাগারটি নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।
নাইজেরিয়ার কারেকশনাল সার্ভিসের মুখপাত্র ফ্রান্সিস এনোবোর বলেছেন, ‘কোগি প্রদেশের কাব্বা এলকায় অবস্থিত ওই করাগারে হামলার পর সন্ত্রাসীরা ২৬৬ জন বন্দিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। হামলাকারীদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।’
বন্দুকধারীরা বিস্ফোরকের সাহায্যে কারাগারের তিনদিকের নিরাপত্তা দেওয়াল ধ্বংস করে দেয়। এনোবোর জানান, হামলায় তাদের দু’জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তবে নাইজেরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, হামলার পর থেকে তাদের আরও দু’জন গার্ড নিখোঁজ রয়েছেন।
নাইজেরিয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। সশস্ত্র ডাকাতি, অপরাধ চক্র, উত্তর পূর্বাঞ্চলে ইসলামিক বিদ্রোহীদের তৎপরতা এবং উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে স্কুলে পড়ুয়া শিশু অপহরণের ঘটনা মোকাবেলা করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
নাইজেরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাব্বা জেলের ২৯৪ বন্দির মধ্যে ২৮ জন পালাতে পারেনি। বাকি ২৬৬ জনই পালিয়েছে। কারা বিভাগ প্রাথমিকভাবে ২৪০ জন পালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল।
নাইজেরিয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে বেশ আগেই থেকে। সম্প্রতি দেশটির উত্তর–পশ্চিমে একটি স্কুলে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। স্কুলটি থেকে তারা ৭৩ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে।
নাইজেরিয়ায় অপহরণের এমন ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা সাধারণত মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেয়। তবে যাদের পরিবার মুক্তিপণ দিতে পারে না, তাদের হত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে।
নাইজেরিয়ার জামফারা, কাতসিনা ও কাদুনা রাজ্যে এসব অপহরণকারীর অবস্থান। এই প্রদেশগুলোয় বিস্তৃত বনাঞ্চলে তাদের ঘাঁটি রয়েছে। এই অপহরণকারীদের নির্মূলে এর আগে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দেশটিতে অপহরণসহ নানা অপরাধ দমন করতে সম্প্রতি বাসিন্দাদের ওপর নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্যের সরকার। সরকারের এমন পদক্ষেপের পর এবার এ অপহরণের ঘটনা ঘটল।
এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
চলতি বছর নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সহিংসতা বেড়ে যায়, এতে দেশটির পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৭ জন সদস্য মারা গেছেন বলে দাবি করেছে দেশটির পুলিশ।
দক্ষিণাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করছে বায়াফরা আদিবাসী জনগণ (আইপিওবি)। হামলার পেছনে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর সামরিক শাখা ইস্টার্ন সিকিউরিটি নেটওয়ার্কের (ইএসএন) হাত রয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
যদিও আইপিওবি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অ্যামনেস্টির নাইজেরিয়ার পরিচালক ওসাই ওজিগো বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ইমো, আনামব্রা ও আবিয়া রাজ্যে নাইজেরিয়ান নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতদের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩২৭
আপনার মতামত জানানঃ