গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া। বন্যায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে।।বুধবার (১২ অক্টোবর) এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
নাইজেরিয়ার মানবিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) জানিয়েছে, বন্যায় ১৪ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মারা গেছেন প্রায় ৫০০ জন, আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৫৪৬ জন।
এছাড়া ৪৫ হাজার ২৪৯টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ৭০ হাজার ৫৬৬ হেক্টর জমির ফসল।
দেশটিতে জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র মানজো এজেকিয়েল গত বুধবার বলেছেন, প্রাপ্ত এসব পরিসংখ্যান মূলত গত সপ্তাহান্তের।
তিনি বলেন, যদিও বর্ষাকাল জুনের কাছাকাছি শুরু হয়েছে, তবে বেশিরভাগ মৃত্যু ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছিল আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে।
এর আগে, সর্বশেষ ২০১২ সালে নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় ৩৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই বছর ঘরছাড়া হয়েছিলেন ২১ লাখেরও বেশি মানুষ।
এদিকে, জুনে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানে অন্তত ১ হাজার ১৩৬ জন বন্যার কারণে মারা গেছেন। দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পানিতে ডুবে গেছে৷ এমন বৃষ্টি পাকিস্তান এর আগে কখনও দেখেনি।
দুর্যোগে মোকাবিলায় অক্ষম বিশ্বের অর্ধেক দেশ
দিন যত গড়াচ্ছে, ততই চরম হচ্ছে জলবায়ু। বিগত বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাও বেড়েছে। সংকটময় এমন পরিস্থিতির মধ্যে শঙ্কা জাগানিয়া তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ।
বিশ্ব সংস্থাটি বলছে, দুর্যোগের পূর্বাভাস বা আগাম সতর্কতা পেতে আধুনিক সরঞ্জাম নেই বিশ্বের অর্ধেক দেশের কাছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কতা পেতে যেসব দেশের ব্যবস্থা দুর্বল, সেগুলোর সঙ্গে উন্নত ব্যবস্থা থাকা দেশগুলোর তুলনা করা হয়েছে।
দেখা গেছে, দুর্বল ব্যবস্থা থাকা দেশগুলোয় দুর্যোগে মৃত্যুর পরিমাণ গড়ে আট গুণ বেশি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে। তবে সেগুলো যে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে, এমন কোনো কথা নেই।
বিপর্যয় ঠেকাতে বহুমুখী দুর্যোগের বিষয়ে আগাম সতর্কতা দিতে পারে, এমন ব্যবস্থা সব দেশের কাছে থাকা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের অর্ধেকের কম স্বল্পোন্নত দেশের হাতে বহুমুখী দুর্যোগের বিষয়ে আগাম সতর্কতা দিতে পারে, এমন ব্যবস্থা রয়েছে। আর ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দুর্যোগ পূর্বাভাসের এ ব্যবস্থার সুবিধা পাচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিআরআরের প্রধান মামি মিজুতোরি বলেছেন, জীবন, জীবিকা ও সম্পদ রক্ষায় জরুরিভাবে এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছিল প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে ১ হাজার ১৪৭ জন। এ সংখ্যা এখন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুর্যোগের শিকার হয়েছে প্রতি ১ লাখে ২ হাজার ৬৬ জন।
তবে একই সময়ে দুর্যোগের কারণে মৃত্যু ও নিখোঁজের সংখ্যা কমেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এ সংখ্যা প্রতি ১ লাখে ১ দশমিক ৭৭ জন ছিল। অপর দিকে ২০১২ থেকে ২০২১ সালে তা কমে শূন্য দশমিক ৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
দুর্যোগে আগাম সতর্কতার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যার দিকে ইঙ্গিত করেন মামি মিজুতোরি। ওই বন্যায় দেশটির এক-তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে যায়, মৃত্যু হয় প্রায় ১ হাজার ৭০০ জনের। মিজুতোরি বলেন, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা না থাকলে মৃত্যু আরও বেশি হতে পারত।
পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের সব দেশের কাছে যেন আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা থাকে, এ লক্ষ্যে কাজ করছে জাতিসংঘ। আগামী নভেম্বরে মিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলন।
সেখানে সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়ে একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, যেসব দেশ জলবায়ু সংকটের জন্য সবচেয়ে কম দায়ী, তাদেরই এ সংকটের সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৪০
আপনার মতামত জানানঃ