আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় আবারও বন্দুকধারীরা একটিু স্কুলে হামলা চালিয়ে ৭৩ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেছে। স্থানীয় সময় বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার একটি আবাসিক স্কুলে এ ঘটনা ঘটে।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ৮ মাসে এ পর্যন্ত দেশটির ওই অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০ বার এরকম অপহরণের ঘটনা ঘটেছে এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। নাইজেরীয় পুলিশের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
নাইজেরিয়ার জামফারা প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ শেহু এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বুধবার সকালে দেশটির কায়া এলাকার একটি প্রান্তিক গ্রামে সন্ত্রাসীরা গভর্নমেন্ট ডে সেকেন্ডারি স্কুলে হামলা চালায় এবং ৭৩ জন শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে।
তিনি আরও বলেন, বহু সংখ্যক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সেসময় স্কুলটিতে হামলা করে ও শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে। অপহৃত শিক্ষার্থীদের সন্ধান ও মুক্ত করতে পুলিশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আলজাজিরা জানিয়েছে, অস্ত্রধারী এসব সন্ত্রাসীরা স্থানীয়ভাবে ‘ডাকাত’ নামে পরিচিত। বছরের পর বছর ধরে তারা নাইজেরিয়ার সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করাসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীও তাদেরকে মোকাবিলায় রীতিমতো সংগ্রাম করছে।
প্রায়ই বিপুলসংখ্যক স্কুলশিক্ষার্থীকে অপহরণের পর অভিভাবকদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে সন্ত্রাসীরা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়া হলেও হত্যার শিকারও হয়েছে অনেকে। চলমান পরিস্থিতিতে জামফারাসহ নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি প্রদেশে বাসিন্দাদের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। গণঅপহরণ ও অন্যান্য সহিংসতা ঠেকাতে নেয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ।
এর আগে নাইজেরিয়ার কাদুনা রাজ্যের একটি আবাসিক বিদ্যালয়ে বন্দুকধারীদের হামলায় ১৪০ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, কাদুনা রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে বেথেল ব্যাপ্টিস্ট হাইস্কুলে ছাত্রাবাসে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। রাতভর চালানো হামলায় ওই বিদ্যালয়ের ১৪০ শিক্ষার্থী অপহরণ করা হয়। উদ্ধার করা সম্ভব হয় একজন শিক্ষিকাসহ ২৬ জনকে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন রেভারেন্ড জন হায়াব বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ২৫ জন শিক্ষার্থী পালিয়ে আসতে পেরেছে। তাদের মধ্যে তার ১৭ বছরের ছেলেও রয়েছে। জন হায়াবের ভাষ্যমতে, স্কুলে ১৮০ জনের মতো শিক্ষার্থী ছিল। তারা পরীক্ষায় বসার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল।
গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে উত্তর নাইজেরিয়ার বিভিন্ন স্কুল থেকে ১ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণের পর বন্দুকধারীরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পিতামাতার কাছে বড় অংকের মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণের পর বেশিরভাগকে মুক্তি দেওয়া হলেও বন্দি অবস্থায়ই অনেকে মারা যান, আবার অনেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
২০১৪ সালে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় চিবক শহরে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম ২৭৬ জন ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনা ঘটার পর বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।। তবে সাম্প্রতিক হামলাগুলো সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলোর কাজ বলে ধারণা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুক্তিপন চেয়ে অপহরণের ঘটনা বেড়েই যাচ্ছে। এতে অভিভাবকরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতেও শঙ্কিত হয়ে পড়ছে ফলে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা পড়েছে হুমকির মুখে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৪
আপনার মতামত জানানঃ