ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্র যদি তেল আবিবের পক্ষ নেয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেবে তেহরান। একাধিক আরব দেশের মাধ্যমে ওয়াশিংটনকে এই বার্তা দিয়েছে তেহরান। সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় দুই শীর্ষ ইরানির জেনারেল নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর ইরানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে এই প্রথম কোনো কড়া বার্তা দেওয়া হলো।
প্রসঙ্গত, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় সময় রোববারের (১৪ এপ্রিল) মধ্যে ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে ইসরাইলে হামলা চালাতে পারে ইরান।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইনটেলিজেন্স এজেন্সি ওয়ার্ল্ডওয়াইড থ্রেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলের মাটিতে হামলা চালানো হতে পারে। দুই হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে মিসাইল হামলা চালানোর সক্ষমতা ইরানের আছে।
মার্কিন নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভূমধ্যসাগরে পূর্ব দিকে মোতায়েন তাদের দুটি যুদ্ধজাহাজ স্থান পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। সেইসঙ্গে এই অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ইসরাইলে হামলা না করতে ইরানকে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইরান শিগগিরই ইসরাইলে হামলা চালাতে পারে। আমি হামলা নিয়ে নিশ্চিত তথ্য পেতে চাই না। তবে ধারণা করছি, শিগগিরই এ হামলা চালানো হবে।
বাইডেন বলেন, আমরা ইসরাইলকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই রাষ্ট্রটির প্রতি সবসময় আমাদের সমর্থন থাকবে। ইসরাইলকে রক্ষা করতে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব এবং ইরান সফল হতে পারবে না।
এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহেই ইরান আরব দেশগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিলে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাবে তেহরান।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) আল-কুদস ফোর্সে দুই শীর্ষ জেনারেলসহ সব মিলিয়ে ১১ জন নিহত হয়। সেই হামলার পর থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ান ও আইআরজিসি প্রধানসহ শীর্ষস্থানীয় নীতি নির্ধারকেরা একাধিকবার ইসরায়েলের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে, গত সপ্তাহের শেষ দিনে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্যের মূল্যায়নের ভিত্তিতে জানিয়েছিল, ইসরায়েলের মাটিতে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ইরান হামলা চালাতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের উত্তর বা দক্ষিণ অঞ্চলে এই হামলা হতে পারে। তবে ইরান সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জানিয়েছে, তেহরান ইসরায়েলে হামলার ব্যাপারে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তার আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো মনে করছে, ইসরায়েলে বড় ধরনের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা অত্যাসন্ন। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সরকারি ও সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে ইরান।
সর্বশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, ইসরায়েলে ইরানি আক্রমণ অত্যাসন্ন। একই সঙ্গে তিনি ইরানকে ইসরায়েলে আক্রমণ না করতে সতর্ক করে দিয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলকে সম্ভাব্য ইরানি আক্রমণ থেকে রক্ষায় তৎপর হয়েছে হোয়াইট হাউস।
জো বাইডেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলে ইরানের হামলা দেরিতে নয়, খুব শিগ্গিরই হবে।’ এই অবস্থায় তিনি ইরানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘তেহরানের প্রতি আমাদের বার্তা স্পষ্ট, (ইসরায়েলে হামলা) চালিও না।’
অন্যদিকে ইরানের সম্ভাব্য হামলার পর করণীয় ঠিক করতে শুক্রবার প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেন নেতানিয়াহু। বৈঠকে ইরানের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে আলোচনা করলেও সিদ্ধান্ত কি নিয়েছেন সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। তবে, যে কোনো হামলা মোকাবিলায় নেতানিয়াহু বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়।
আপনার মতামত জানানঃ