
দিনাজপুরের হাকিমপুরে এক মাদ্রাসাছাত্রকে(১০) হত্যার ভয় দেখিয়ে নিয়মিত ধর্ষণ করে আসছিলেন মমিনুল ইসলাম সুজন(২৭) নামে এক মাদ্রাসাশিক্ষক। জানাজানি হলে এলাকাবাসী মাদ্রাসাশিক্ষককে গণধোলাই দিয়ে মাদ্রাসা কক্ষে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। পরে রাতে হিলি হাকিমপুর উপজেলার বিশাপাড়া এলাকায় হিলফুল ফুযুল মাদ্রাসা থেকে অবরুদ্ধ অবস্থায় পুলিশ তাকে আটক করে। ঘটনাটি ঘটে গতকাল শুক্রবার(২০ আগস্ট) রাতে।
অভিযুক্ত মমিনুল ইসলাম সুজন উপজেলার চেংগ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি উপজেলার হিলফুল ফুযুল নামে কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি ওই মাদ্রাসার হোস্টেল তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তিনি ওই মাদ্রাসায় যোগ দেন বলে জানা গেছে।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, শুক্রবার রাতে মোবাইলের মাধ্যেমে খবর আসে ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসাশিক্ষককে আটকে রেখেছে এলাকাবাসী। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে শিশুর বাবা মাদ্রাসাশিক্ষক মমিনুল ইসলাম সুজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে ওই শিশুর বাবা উল্লেখ করেন, হিলি হাকিমপুর উপজেলার বিশাপাড়া এলাকায় হিলফুল ফুযুল মাদ্রাসায় তার ছেলে বোর্ডিংয়ে থেকে লেখাপডা করে আসছিল। অভিযুক্ত শিক্ষক মমিনুল ইসলাম ওই মাদ্রাসায় রাত্রি যাপন করতেন। সেই সুবাদে ওই শিক্ষক শিশুকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করতেন। এই ঘটনা কাউকে বললে শিশুকে হত্যার হুমকিও দিতেন।
প্রতিদিনের মতো গত ১৬ আগস্ট ওই শিশুকেও সে ফের বলাৎকার করে। শুক্রবার মাদ্রাসা ছুটি হওয়ায় শিশুটি বাড়ি গিয়ে তার মাকে বিষয়টি জানায়। পরে বিষয়টি নিয়ে শিশুর পরিবার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন।
এদিকে, বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে গ্রামবাসী অভিযুক্ত শিক্ষককে গণধোলাই দিয়ে মাদ্রাসার কক্ষে আটক রেখে পুলিশকে খবর দেয়।
ওসি আরও জানান, নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রের বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। এরপর অভিযুক্ত মমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অপরাধ স্বীকার করেছেন। আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশে এখন ছেলে শিশু ধর্ষণ উদ্বেগজনক হারে বড়ে গেছে৷ কিন্তু ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার তেমন কোনো নজির দেখা যায় না। প্রায় সমস্তটাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা মাতব্বর কর্তৃক শালিসে বিচারের মাধ্যমে সুরাহা করা হয়। তবে এবিষয়ে আইনে সুস্পষ্টভাবে তেমন কিছু নেই বলে অনেকে দাবি করলেও আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, একটা ভুল ধারণা চলে আসছিলো যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শুধু নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হলেই বিচার করা যাবে৷ কিন্তু এই আইনের সংজ্ঞায় শিশু বলতে ছেলে বা মেয়ে আলাদা করা হয়নি৷ ১৬ বছর পর্যন্ত সব শিশুকেই বুঝানো হয়েছে৷ শিশু আইনেও শিশুদের কোনো লিঙ্গ ভাগ করা হয়নি৷ তাই ১৬ বছর পর্যন্ত কোনো ছেলে শিশু যদি ধর্ষণের শিকার হয় তাহলে ধর্ষণ মামলাই হবে৷ যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৩৫
আপনার মতামত জানানঃ