গাজীপুরে শিশু ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় মাদ্রাসার এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে আরও তিন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সিটি করপোরেশনের গাছা ডেগেরচালা এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারের পর বুধবার সকালে তাদের আদালতে তোলা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি ও মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার শিক্ষকের নাম আব্দুর রহমান ওরফে শান্ত ইসলাম। তিনি গাছা থানার ডেগেরচালা এলাকার মঈনুল ইসলাম হামীয়ুস সুন্নাহ মাদরাসার শিক্ষক ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার রাখাল বুরুজ এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও মুন্সীগঞ্জ সদরের জাজিরা এলাকার মোবারক আলীর ছেলে মো. ইসমাইল (৪৪), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার আমিরপুর এলাকার হারুন-অর-রশিদের ছেলে ফকরুল ইসলাম (২৭) এবং ময়মনসিংহ সদরের চরপাড়া এলাকার আজিজুল হকের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩২)।
নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবার বরাত দিয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার আবু সায়েম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ভোরে মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষক আব্দুর রহমান ওই ছাত্রকে বিস্কুট দেয়ার কথা বলে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি জানার পর শিশুটির বাবা মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ আরও দুই শিক্ষককে জানান। এ সময় তারা বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে কৌশলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন তারা, যাতে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়।
‘সোমবার ভুক্তভোগীর বাবা আবারও শিক্ষকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে পরীক্ষা শেষ হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তারা। কোনো প্রতিকার না পেয়ে শিশুটির বাবা ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করেন। অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করতে গেলে মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ আরও দুই শিক্ষক পুলিশের কাজে বাধা দিলে তাদেরও আটক করা হয়।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে ভিকটিমের বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে গাছা থানায় মামলা হয়। আটকদের সবাইকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইব্রাহিম হোসেন জানান, ভিকটিমের বাবা কোনো প্রতিকার না পেয়ে ঘটনাটি পুলিশকে জানান। পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে সোমবার বিকেলে আটক করতে গেলে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ অন্য দুই শিক্ষক পুলিশের কাজে অসহযোগিতা ও বাধা দেন।
শিশুটির বাবা সোমবার মধ্যরাতে বাদী হয়ে গাছা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরে ওই রাতেই অভিযুক্ত শিক্ষক এবং মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ আরও দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিক্ষার্থীরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ