নোয়াখালীতে মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা কমপ্লেক্স ও এতিমখানায় রাতের খাবার খেয়ে নুর হাদী নিশান (৯) নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১৭ ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবার বয়স ৯-১০ বছরের মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদ্রাসার ছয় শিক্ষককে আটক করা হয়েছে।
সোমবার (২ আগস্ট) রাত পৌনে ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার ৭ নং একলাশপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পূর্ব একলাশপুর গ্রামের মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা কমপ্লেক্স ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালে ভর্তি করানো শিশুরা হলো— নুর হোসেন (১০), শান্ত (১০), রিফাত (৯), মেহরাজ (১২), মামুন (১১), শিপন (১২), মারুফ (১০), আলিফ (১০), মামুন (১০), শাহীন (১০), আরমান (১০), সোহাগ (১০), আশিক (১২), আবদুর রহিম (৮), পারভেজ (১০), মোজাম্মেল (১০) ও সামির (১০)। হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে পাঁচটি শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
নিহত নুর হাদী নিশান বেগমগঞ্জ উপজেলার ৭নং একলাশপুর ইউনিয়নের পূর্ব একলাশপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে। সে মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার নূরানী বিভাগের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
জানা গেছে, সোমবার দুপুরে এতিমখানার ছাত্রদের জন্য গরুর মাংস রান্না করা হয়। দুপুরে রান্না করা খাবার এশার নামাজের পর ছাত্রদের দেওয়া হয়। ২০টি শিশু শিক্ষার্থী প্রথম খেতে বসে। খাবার শুরু করার পর শিক্ষার্থীদের কাছে মাংস দুর্গন্ধ অনুভূত হলে তারা আর মাংস খায়নি। ভাতের সঙ্গে থেকে যাওয়া ঝোল দিয়ে খাওয়া শেষ করে।
মাদ্রাসা ও এতিমখানা শিক্ষক মো. দাউদ ইব্রাহিম জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, সোমবার দুপুরে এতিমখানার ছাত্রদের জন্য গরুর মাংস রান্না করা হয়। দুপুরে রান্না করা গরুর মাংস দিয়ে এশার নামাজের পর এতিমখানার ছাত্রদের রাতের খাবার দেওয়া হয়। ২০টি শিশু শিক্ষার্থী প্রথম খেতে বসে। খাবার শুরু করার পর শিক্ষার্থীদের কাছে মাংস দুর্গন্ধ অনুভূত হলে তারা আর মাংস খায়নি। ভাতের সঙ্গে থেকে যাওয়া ঝোল দিয়ে খাওয়া শেষ করে।
দাউদ ইব্রাহিম জানান, খাবার শেষ করার কিছুক্ষণ পর শিশুরা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। তারা একের পর এক বমি করা শুরু করে। তাৎক্ষণিক তারা স্থানীয় একজন চিকিৎসককে ডেকে এনে ঘটনা জানালে তিনি অসুস্থ শিশুদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। এরপর গুরুতর অসুস্থ ১৮টি শিশুকে অন্যান্য শিক্ষকেরা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশানকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাদ্রাসার এই শিক্ষকের তথ্যমতে, মাদ্রাসা ও এতিমখানাটিতে সর্বমোট ১২০টি শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৬১টি এতিম শিশু রয়েছে। প্রথম দফায় খেতে বসা ২০টি শিশুর সমস্যা হচ্ছে দেখে বাকিরা আর রাতের খাবার খায়নি।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার ওই দৈনিককে বলেন, এতিমখানায় খাবার খেয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া একই ঘটনায় আরও ১৭টি শিশুকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তীতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতাল থেকে খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেছে।
এদিকে এতিমখানায় রাতের খাবার খেয়ে এক শিশুর মৃত্যু ও ১৭ শিশু অসুস্থ হওয়ার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এর প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল আলমকে।
এদিকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এতিমখানা ও মাদ্রাসার ছয় শিক্ষককে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। ভোরে তাদের এতিমখানা থেকে পুলিশের একটি দল বেগমগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। এ ছাড়া এই ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিহত শিশুর পরিবারকে থানায় আসতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম জানান, কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার বলেন, ছয়জন শিক্ষককে আজ ভোরে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। ওসি বলেন, নিহত শিশুর বাবা প্রবাসী। এ কারণে শিশুটির চাচাকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। তিনি এলে যদি মামলা করতে রাজি হন, তাহলে মামলা নেওয়া হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০৫
আপনার মতামত জানানঃ