যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবশেষে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলেন জো বাইডেন। মার্কিন কংগ্রেস জো বাইডেনকে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং কমালা হ্যারিসকে পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। এদিকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা রইল না।
গতকাল বুধবার (০৬জানু) ট্রাম্পের শত শত উগ্র সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যয়নে এ সময় কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছিল। নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজিত হওয়ার ফল পাল্টে দেওয়ার লক্ষ্যে এ হামলা চালানো হয়। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখে একপর্যায়ে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার অধিবেশন শুরু হয়। যৌথ অধিবেশন ফের শুরু করে বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। পেনসিলভ্যানিয়া ও অ্যারিজোনার ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে রিপাবলিকান দলের কয়েক সিনেট সদস্যের আপত্তিকে উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
কংগ্রেস রাজ্যগুলোর ফলাফলের ইলেকটোরাল কলেজ টালি নিশ্চিত করেছে আর তাতে ৩ নভেম্বরের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেন জয়ী হয়েছেন, এমনটি দেখা গেছে বলে ঘোষণা করেন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
ইলেকটোরাল কলেজে বাইডেন ৩০৬ ও ট্রাম্প ২৩২ ভোট পেয়েছেন বলে অধিবেশন স্বীকৃতি দেয়।
এদিকে ফেসবুক টুইটার ইন্সটাগ্রাম ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাউন্ট বন্ধ করে দিলে তার মুখপাত্রের একাউন্ট থেকে স্বেচ্ছায় হোয়াইট হাউস ছাড়ার সরাসরি ঘোষণা দেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, জো বাইডেনের কাছে সুশৃঙ্খলভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। নির্বাচনের ফল নিয়ে যদিও আমার সম্পূর্ণ দ্বিমত রয়েছে এবং ঘটনাবলীও আমাকে সমর্থন করছে; তথাপি আগামী ২০ জানুয়ারি সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর এক বিবৃতিতে তিনি এমন দাবি করেন।
৩ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফলে রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হারিয়ে দেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন। এরপর নির্বাচন পদ্ধতির দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও জিতেন বাইডেন।
কংগ্রেসে ইলেক্টোরাল ভোটের অনুমোদনের মাধ্যমে বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া বাকি ছিল। এখন হোয়াইট হাউসে উঠতে আর কোনো বাধা রইল না বাইডেনের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথা অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন।
বুধবার কংগ্রেস অধিবেশনকে ঘিরে মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম কালো দিন দেখল বিশ্ব। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় উল্টে দেওয়ার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরের পর হামলা শুরু হয়। হামলাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ক্যাপিটল ভবন কার্যত দখল করে নিলে অধিবেশন মুলতবি করতে বাধ্য হয় কংগ্রেস। পুলিশ পাহারা দিয়ে আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে নেয়া হয় আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলে। যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেও পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের নেয় পুলিশ। ক্যাপিটলকে ট্রাম্প সমর্থকদের দখলমুক্ত করতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। পরের তিন ঘণ্টায় হলওয়েগুলো দিয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের ছোটাছুটি ও বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি, হাঙ্গামা-বিশৃঙ্খলায় এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সহিংসতার মধ্যে গুলিতে একজন নারী নিহত হন। পরে আরো তিনজনের মৃত্যুর খবর জানায় ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ। এফবিআই জানায়, তারা দুটি সম্ভাব্য বিস্ফোরক ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করেছে।
মূলত, জর্জিয়ার সিনেট নির্বাচনে দুই ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জয়ের খবর আসার পরই এই হামলার ঘটনা ঘটে। কারণ, এ দুটি আসনের জয়-পরাজয়ের ওপর সিনেটে দুই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্ভর করছিল। এই জয়ের ফলে ক্ষমতা গ্রহণের পর কংগ্রেসে জো বাইডেনের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৫
আপনার মতামত জানানঃ