দেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিক্ষার্থীরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে। এরইমধ্যে শোনা গেল নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দাসগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বুধবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাতে লালপুর উপজেলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি।
নাটোর র্যাব অফিসের কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বরাত দিয়ে তিনি জানান, গত ৬ মার্চ ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বাদী হয়ে বড়াইগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় বড়াইগ্রাম উপজেলার দাসগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হযরত আলী (৬০) একই মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুজন ছাত্রীকে কাগজপত্রের ভুল ঠিক করার জন্য মাদ্রাসায় ডাকে। ছাত্রীদ্বয় মাদ্রাসায় গেলে তাদেরকে নিজ অফিস কক্ষে ডেকে একজন ছাত্রীকে ১০০ টাকা দিয়ে দোকানে পাঠান এবং দরজা বন্ধ করে অপর ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ভিকটিম চিৎকার করলে তিনজন ছেলে জানালা দিয়ে দেখে ফেললে অধ্যক্ষ ওই ছাত্রীকে ছেড়ে দেয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হযরত আলী ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
ভিকটিম ও তার পরিবারের লোকজন সামাজিক মর্যাদা ও মান সম্মানের কথা চিন্তা করে বিষয়টি চেপে রাখলেও পরবর্তীতে বিষয়টি প্রকাশ হয়। এরপর ভিকটিমের মা বাদী হয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বড়াইগ্রাম থানায় মামলা দায়ের করেন।
এরপর থেকে পলাতক ছিলেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষ হযরত আলী। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে লালপুর থানা এলাকা থেকে হযরত আলীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হযরত আলী ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ