
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ তুলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ অভিযোগে একটি মামলা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। আজ বৃহস্পতিবার(১১ ফেব্রুয়ারি) অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মামলার বিষয়ে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক সায়মা পারভীনের নেতৃত্বে একটি দল ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে। তদন্তের জন্য প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক অডিট রিপোর্ট, প্রতিবেদন, দাখিলপত্র ও বিভিন্ন সময়ে জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে ভ্যাট গোয়েন্দা দল।
তদন্ত শেষে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মোট সুদসহ অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৩৫ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৩ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য বিমার ওপর ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৪১১ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। সেই হিসাবে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৯ কোটি ৮০ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৯ টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এই ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১১ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৮ টাকা সুদ হিসাবে প্রযোজ্য হবে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরীক্ষা মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট অনুযায়ী উৎসে ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৮০৩ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তাদের প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার ২৪৯ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৫ হাজার ৪৪৬ টাকার ফাঁকি ধরা পড়ে। উৎসে কর্তনের ওপর প্রযোজ্য এই ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসিক ২ শতাংশ হারে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৯ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য।
অন্যদিকে, তদন্তের সময়কালে প্রতিষ্ঠানটি স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ১ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৮০ টাকা পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার ১০১ টাকা। তারা ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা। ভ্যাট আইন অনুযায়ী এই ফাঁকির ওপরেও মাসিক ২ শতাংশ হারে ২ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮১ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
এই তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১৬ কোটি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৯০৫ টাকা এবং সুদ বাবদ ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৬২ হাজার ৮২৮ টাকাসহ ৩৫ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৩ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।
ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এটা ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চার বছরের ভ্যাট ফাঁকির টাকার অংক। ওই চার বছরের কাগজপত্র যাচাই করে এ অংক পাওয়া গেছে। এখনও তাদের কার্যক্রমের ওপর পর্যবেক্ষণ চলছে।
তদন্তে আরও দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। এ সবের পরিপ্রেক্ষিতে আজ ভ্যাট আইনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমানের সঙ্গে কয়েকটি দৈনিক বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি এবং টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনেকেই ভোক্তাদের কাছ থেকে ঠিকই ভ্যাট আদায় করছেন – কিন্তু সেটি সরকারকে দেন না। এজন্য ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন এবং লেনদেনে প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরী বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২৭
আপনার মতামত জানানঃ