গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক হিসাব অনুসারে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ৫৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হতে পারে।
আজ রোববার (১৪ মে) রাজধানীতে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলন ও আলোচনা সভায় এই হিসাব উপস্থাপন করেন পিআরআই এর গবেষণা পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
তবে অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের রাজস্ব আদায়ের ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করে পিআরআই প্রক্ষেপণ করছে, এনবিআর ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে।
পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন থিঙ্ক ট্যাঙ্কটির চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার।
প্রসঙ্গত, ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের একটি শর্ত হিসেবে, বাংলাদেশকে আগামী অর্থবছর নাগাদ জিডিপিতে করের অবদান শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আন্তর্জাতিক ঋণদাতাটির হিসাব অনুসারে, চলতি অর্থবছরে এনবিআর হয়তো ৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে।
যদিও পিআরআই এর তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় আইএমএফের হিসাবের চেয়ে ২১.৪০ হাজার কোটি টাকা কম হবে।
এই ব্যর্থতার জন্য এনবিআরের সক্ষমতার ঘাটতি এবং দরকারি সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে পিআরআই।
একইসঙ্গে প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পড়তি অবস্থা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও নিম্ন রাজস্ব সংগ্রহকে দেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে গবেষণা সংস্থাটি।
ড. রাজ্জাক বলেন, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে চাপের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে, ড. মনসুর মতপ্রকাশ করেন যে, আগামী ৫ থেকে ৭ মাসের মধ্যে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, দেশের আর্থিক খাতের ওপর মানুষের আস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা রাতারাতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই কমার বদলে অর্থপাচার আরো বাড়তে পারে।
ড. সাত্তার ও ড. রাজ্জাক দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর আস্থার সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব বিষয় সমাধানে সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন ড. মনসুর।
প্রতিদিন মাত্র ৮২৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক-কর আদায়ের চিত্র মোটেও সন্তোষজনক নয়। এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৮২৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। ফলে কর বিভাগকে বাকি তিন মাসে দ্বিগুণ গতিতে শুল্ক-কর আদায় করতে হবে।
শুল্ক-কর আদায়ের চিত্র বলছে, লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে এনবিআরকে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। বাজেটে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে। এই বিশাল লক্ষ্য অর্জনে আদায়ের গতি বেশ বাড়াতে হবে শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের। বছরের শেষ প্রান্তিকে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত হলো রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। সে জন্য আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক প্রবণতার বাইরে জিডিপির অতিরিক্ত দশমিক ৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তব চিত্র ভিন্ন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি বরং খারাপ হচ্ছে। বিশেষ করে শুল্ক ও আয়কর খাতে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। মার্চ মাসে আগের বছরের তুলনায় আদায় কমে গেছে। বছরের প্রথম ৯ মাসে সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি থাকলেও তা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।
৯ মাসে বড় ঘাটতি
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে এনবিআরের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা আদায়। তবে এনবিআর আদায় করতে পেরেছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে সম্পূরক শুল্ক বা ভ্যাট। এর পরিমাণ মোট ৮৬ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আয়কর আদায় হয়েছে ৭১ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। আর আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য কর আদায়ের পরিমাণ ৬৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।
শুধু ভ্যাটেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। অন্য দিনে আয়করে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং আমদানি শুল্কে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এসডব্লিউএসএস/১০৩০
আপনার মতামত জানানঃ