
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেন এলাকায় বিভিন্ন গণপরিবহন থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে। সিটি করপোরেশনের টোলের নামে এই চাঁদাবাজির জন্য মোড়ে মোড়ে নামানো হয়েছে উঠতি বয়সী তরুণসহ শতাধিক যুবককে। তাদের হাতে থাকে টোলের রসিদ। কোথাও গাড়ি দাঁড়ানো মাত্রই টোল আদায়কারীরা দৌড়ে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রসিদ ধরিয়ে দিয়ে টাকা দাবি করে। তিন মাস আগে গুলিস্তান-জয়কালী মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনাল একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ইজারার শর্ত ছিল, শুধু টার্মিনাল থেকে বের হওয়া এবং বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত বাস-মিনিবাস থেকে টোল আদায় করা যাবে, যা মূল সড়কে চলাচল করে। এই শর্ত অমান্য করে এখন সব ধরনের যানবাহন থেকে টোল আদায় করছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান গুলশান চাকা লিমিটেড। এছাড়া অবৈধভাবে ‘সাব-ইজারাদার’ নিয়োগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের ১১ নভেম্বর গুলিস্তান-জয়কালী মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনালের টার্মিনাল ফি ও কুলিমজুরি খাতে রাজস্ব আদায়ে ইজারা পায় গুলশান চাকা লিমিটেড। ইজারা মূল্য দুই কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকা। কিন্তু তারা এখন মতিঝিল, কমলাপুর, জুরাইন, কদমতলী, পোস্তগোলা, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, কোনোপাড়া, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, মাতুয়াইল, মেরাদিয়া, নন্দিপাড়া, মাদারটেক, যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাস, মিনিবাস, সিএনজি, টেম্পু, পিকআপ, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রো থেকেও টোল আদায় করছে। এছাড়া এসব এলাকা থেকে টোল আদায়ে পৃথক পৃথক সাব-ইজারাদার নিয়োগ দিয়েছেন গুলশান চাকার প্রোপ্রাইটর জাকিয়া সুলতানা। বিনিময়ে প্রতিটি সাব-ইজারাদারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জামানত নিয়েছেন তিনি।
শনির আখড়া-রায়েরবাগ এলাকায় সাব-ইজারাদার হাবিব মিয়ার পক্ষে টোল আদায় করেন শহিদুল। তবে হলুদ টোলের রশিদে ইজারাদারের নাম লেখা জাকিয়া সুলতানা। এমন রশিদে এই এলাকার প্রতিটি ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা, লেগুনা, সিএনজি, পিকআপ, ট্রাক থেকে ৩০ টাকা করে টোল আদায় করছেন তারা। ফলে অবৈধ যানবাহনগুলো এই সিটি টোলের জোরে চলছে। তা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের সংশ্লিষ্টদের কাউকে দেখা যায়নি।
টার্মিনালে ঘুরে দেখা গেছে সিটি টোলের নামে এই চাঁদা আদায়ের দৃশ্য। যাত্রাবাড়ীর মোড়ে টোল আদায়ে সক্রিয় বেশ কয়েকদল। এদের একদল ডেমরা রোডে, একদল মাওয়া রোডে, একদল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে, আরেকদল গোল চত্ত্বরে টোল আদায় করছে। দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ছাড়াও এরা চলন্ত গাড়ি থামিয়ে টোল আদায় করছে। এ নিয়ে গাড়ির শ্রমিক ও যাত্রীরা খুবই বিরক্ত।
যানবাহন চালকদের অভিযোগ, টোলের নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মূল সড়কসহ সব অলিগলিতে চাঁদাবাজি করছেন সাব-ইজারাদাররা। তাদের অত্যাচারে চালকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। সবকিছু জানার পরও তাদের লাগাম টেনে ধরছে না ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা শহরে পরিবহন খাতে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। অবিলম্বে টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে ডিএসসিসিকে উদ্যোগ নিতে হবে।
শনির আখড়ায় বর্ণমালা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে বাসা-বাড়ির আসবাবপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন ট্রাকচালক ইলিয়াস উদ্দিন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, ‘এই সড়কে ঢুকলেই তারা (সাব-ইজারাদার) হাতে টোকেন (রশিদ) ধরিয়ে দেন। টোকেনে ৩০ টাকা লেখা থাকলেও তারা ২০০ টাকার কমে ট্রাক ছাড়েন না। কেউ টাকা না দিতে চাইলে মারধরও করেন তারা।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, এক সময়ের চাঁদাবাজরা এখন টোলের নামে চাঁদাবাজি করছে। শুধু টার্মিনাল থেকে বের হওয়া এবং বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত বাস-মিনিবাস থেকে টোল আদায় করার বিধান থাকলেও বেপরোয়াভাবে তারা এখন টোল আদায় করছে। এমনকি চলতি গাড়ি থামিয়েও টোলের নামে চাঁদাবাজি করে থাকে। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা। একইসাথে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান গুলশান চাকা লিমিটেড-এর অবৈধভাবে ‘সাব-ইজারাদার’ নিয়োগ দেওয়ার বিষয় তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এসডব্লিউ/জেএন/কেএইচ/১৬৩৯
আপনার মতামত জানানঃ