প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল বিশ্বজগতের সব কিছুর মতো নিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ুও। তবে জলবায়ুর সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো প্রকৃতি, মানুষ, জীবজগৎ, উদ্ভিদজগৎ প্রভৃতির ওপর প্রভাব ফেলছে মারাত্মক। আর এই প্রভাব প্রধানত নেতিবাচক। এসব ক্ষতিকর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী হলো ধনী দেশগুলোর ধনী মানুষগুলোর অপরিণামদর্শী অতিলোভী মনোবৃত্তি ও কার্যকলাপ। অল্প লোকের এই প্রবৃত্তি ও কার্যকলাপ গোটা বিশ্বের সাড়ে সাতশ কোটি মানুষকে দুর্বিপাকে ফেলেছে। ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রদত্ত তথ্য বলছে, ভূপৃষ্ঠের গত ১০০ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৩ থেকে ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আগামী ১০০ বছরে তা বাড়বে ১.৪ থেকে ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভাবার বিষয়, কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সামনে আসছে!
এরই ধারাবাহিকতায় ভয়াবহ বিপদের মুখে বিশ্ব! সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছে নাসা। আর সেখানেই উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর তার মধ্যে অন্যতম হল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে তলিয়ে যেতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র! এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, কমিউনিকেশন আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নাল-এ।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে আমেরিকার উপকূলবর্তী অঞ্চল ডুবে যেতে চলেছে। যদি এই আশঙ্কা সত্যি হয় সেক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়তে চলেছে গোটা বিশ্বে। জানা গিয়েছে, তিন দশকের স্যাটেলাইট ডেটা সামনে রেখে এই গবেষণা করেছে নাসা।
গবেষকদের কথায়, আমেরিয়ায় উপকূলবর্তী এলাকায় পানির স্তর ১২ ইঞ্চি বাড়তে চলেছে। অর্থাৎ বর্তমান পানির স্তরের থেকে এক ফুট বেশি। ফলে নিউ ইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ভার্জিনিয়ার অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। সম্প্রতি এই গবেষণার বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে কমিউনিকেশন আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে।
এ বিষয়ে জলবায়ু বিষয়ক গবেষকরা জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তন যে কোনও দেশের জন্যই উদ্বেগজনক। নাসার এই তথ্য অনেকাংশেই সত্য বলে মনে করছেন তারা। সেক্ষেত্রে আমেরিকার ভবিষ্যত সঙ্কটে বলেই মনে করছেন গবেষকদের একাংশ।
এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য, ‘নাসার গবেষণা আশ্চর্যের নয়। কিন্তু, তা অবাক করার মতো। আমরা জানি পানির স্তর বাড়ছে। তার কারণও জানা। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব এক্ষেত্রে পড়ছে। অবিলম্বে পরিবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে বড় বিপদ অপেক্ষা করে আছে।’
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষক ডেভিড হল্যান্ড বলেছেন, ‘নাসার দেয়া তথ্য একেবারেই সঠিক। তাদের গবেষণামতো ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রতটের উচ্চতা এক ফুট বাড়তে পারে। পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে একাধিক ঝড়, দুর্যোগ হতে পারে। দিন প্রতিদিন সংকট বাড়ছে।’
২০৫০ সালের মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করে একটি ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ হতে চলেছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। গত ৩০ বছরের ডেটা সংগ্রহ করে নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে।
এমনকি কোন উপকূল কতটা ডুববে তাও বলা হয়েছে সমীক্ষায়। আর এর প্রভাব পড়বে বেশ কিছু দেশের ওপর। তিন দশকের স্যাটালাইট ডেটা বিশ্লেষণ করে করা হয়েছে সমীক্ষা। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছে, আমেরিকার উপকূল এক ফুট পর্যন্ত ডুবে যেতে পারে। অর্থাৎ পানির স্তর বর্তমানে যেখানে আছে, তার চেয়েও এক ফুট বাড়তে পারে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উপসাগরীয় উপকূল এবং দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল। অর্থাৎ নিউইয়র্ক, সানফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ভার্জিনিয়ার মতো উপকূলীয় অনেক রাজ্য সমস্যায় পড়বে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে ঝড়ের কারণে সমুদ্রিক বন্যা। এই গবেষণাটি সম্প্রতি কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। নাসার এই গবেষণায় অনেক বৈজ্ঞানিক সংস্থার স্টাডি রিপোর্টও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যাকে বলা হয় সি-লেভেল রাইজ টেকনিক্যাল রিপোর্ট। এতে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ বছরে আমেরিকার উপকূলে শুধুই পানি থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ থেকে ১৪ ইঞ্চি বৃদ্ধি পাবে। উপসাগরীয় উপকূলে তা বৃদ্ধি পাবে ১৪ থেকে ১৮ ইঞ্চি। পশ্চিম উপকূলে ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি বাড়বে। এই গবেষণা করতে জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীদেরও সাহায্য নেওয়া হয়। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী ডেভিড হল্যান্ড বলেছেন, নাসার তথ্য সঠিক। ভবিষ্যতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় আরও দুর্যোগ ডেকে আনবে। অর্থাৎ বিপদ ক্রমাগত বাড়ছে।
সাড়ে ১৮ বছর পর চাঁদের কক্ষপথের পরিবর্তন, এল-নিনো এবং লা-নিনার প্রভাব এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আমেরিকার অনেক উপকূলীয় রাজ্য সামুদ্রিক বন্যার সম্মুখীন হতে চলেছে। অর্থাৎ আগামী সাড়ে ১৮ বছরে সমুদ্রসৈকতের অবস্থা আরও খারাপ হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। সমুদ্র এগিয়ে আসবে। এল-নিনোর কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ উষ্ণ হয়। যার কারণে ঝড়ের পরিমাণ বাড়বে।
নাসার সি-লেভেল চেঞ্জ টিমের প্রধান বেন হ্যামলিংটন বলেন, ‘এটাকে আমরা বড় কোনো চ্যালেঞ্জের চেয়ে কম মনে করছি না। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। গবেষণাটা শুধু আমেরিকার, কিন্তু এর প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বে। ’
এসডব্লিউএসএস/১৩১৫
আপনার মতামত জানানঃ