নতুন আরও দুটি দেশে ছড়িয়েছে মাঙ্কিপক্স। গতকাল ইসরায়েল ও সুইজারল্যান্ড মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে বিশ্বের ১৪টি দেশে ছড়াল রোগটি। ইসরায়েল ও সুইজারল্যান্ড জানিয়েছে, তাদের দেশে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা সম্প্রতি অন্য দেশ সফর করে এসেছে। খবর বিবিসির।
তবে ইসরায়েল বলেছে, তারা অন্য সন্দেহভাজন রোগীর বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছে। সম্প্রতি ইউরোপের কয়েকটি দেশ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ৮০ জনের বেশি লোকের মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ ধরা পড়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আফ্রিকার পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হাজারো রোগী শনাক্ত হলেও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় এত দিন রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।
প্রথমে রোগটি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়। এরপর থেকে তা ইউরোপের দেশগুলোতে ছড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, দেশটিতে ২০ জনের বেশি রোগী মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে দিন দিন সংক্রমণ আরও বাড়ছে।
বাংলাদেশে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিটি বন্দরে (নৌ, স্থল এবং বিমান) অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও এরই মধ্যে সতর্ক করেছে রোগটি নিয়ে। বলা হয়েছে, আগামী দিনে এই রোগের সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। কিন্তু কতটা ভয়ের হয়ে উঠতে পারে এটি? এই রোগে কি মৃত্যুও হতে পারে?
মাঙ্কিপক্স বিরল একটি অসুখ। এর আগে আফ্রিকার কিছু দেশেই এর সংক্রমণ টের পাওয়া গিয়েছিল। এবং আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ৫ বছরের কম বয়সের শিশুরা। কিন্তু এই প্রথম বার বেশি বয়সিদের মধ্যেও এই রোগটি ছড়াচ্ছে।
এই রোগের ধরন কেমন? যত দূর জানা গিয়েছে, তাতে স্মলপক্সের থেকে এই রোগের ভয়াবহতার পরিমাণ কম। কিন্তু চিকেনপক্সের থেকে বেশি।
জ্বর, হাতা-পায়ে ব্যথাতর মতো উপসর্গের পাশাপাশি পক্সে যেমন সারা গায়ে গোটা বেরোয়, এক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। সেই সব উপসর্গ ২ সপ্তাহ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে। তার পরে নিজে থেকেই কমে যাচ্ছে রোগটি।
এর কোনো ওষুধ বা টিকা এখনও পর্যন্ত নেই। তবে যাদের পক্সের টিকা নেয়া আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের ভয়াবহতা তুলনায় কম হচ্ছে বলেই জানা গেছে।
মাঙ্কিপক্সের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টিকার কথা এখনো বলেননি বিশেষজ্ঞরা। তবে বিবিসি বলছে, কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে গুটিবসন্তের টিকা সংরক্ষণ করতে শুরু করেছে। গুটিবসন্তের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের মিল রয়েছে বলে এই টিকা ৮৫ শতাংশ কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এই অসুখটি ছড়ানোর হার তুলনায় বেশি বলেও জানানো হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে। বিশেষ করে সমকামী এবং উভকামী পুরুষদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক থেকে এই রোগ ছড়িয়েছে বলেও সন্দেহ। সেই জন্য পুরুষে পুরুষে যৌনসম্পর্কের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, মাঙ্কিপক্সে মৃত্যু হতে পারে কি-না? এখনও পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা কম। হালে যত জনের মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউই এই অসুখে প্রাণ হারাননি। তাই এটিকে ভয়ঙ্কর বলে মনে করছেন না অনেকেই।
আবার অনেক গবেষকরা জানাচ্ছেন, মাঙ্কিপক্স এমন এক সংক্রামক রোগ; যার উপসর্গ সাধারণত মৃদু। এটি গুটিবসন্তের জন্য দায়ী ভাইরাসের পরিবারভুক্ত। তবে গুটিবসন্তের চেয়ে লক্ষণ মৃদু। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে সাধারণভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। দুই থেকে চার সপ্তাহেই রোগী সেরে ওঠে। কিন্তু সংখ্যাগত দিক থেকে কম হলেও মাঙ্কিপক্স প্রাণঘাতী হতে পারে।
তাই সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। এটাও বলা হচ্ছে, সংক্রমণের সংখ্যা বাড়লে এই রোগটির সমস্যাগুলি আরও বেশি করে বোঝা যাবে।
ডব্লিউএইচওর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডেভিড হেম্যান বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এটি যৌন সংক্রমণের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে, বিশেষ করে প্রজনন অঙ্গের মাধ্যমে। এটা যৌনবাহিত রোগের মতোই সংক্রমিত হচ্ছে, যা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, শারীরিক সংস্পর্শ মাঙ্কিপক্স ছড়ানোর বড় উৎস। যেমন, কোন বাবা–মা যদি তাঁদের অসুস্থ সন্তানকে দেখভাল করেন তবে তাঁরাও ঝুঁকিতে থাকবেন; যেমনটা থাকবেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও।
গুটিবসন্ত গোত্রভুক্ত এই রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশ মাঙ্কিপক্স রোগীদের গুটিবসন্তের টিকার মাধ্যমে চিকিৎসা দিচ্ছে। মাঙ্কিপক্সের অনেক সংক্রমণই ধরা পড়েছে যৌনরোগের চিকিৎসা কেন্দ্রে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৩৫
আপনার মতামত জানানঃ