২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ‘কাউন্টারিং আমেরিকাজ অ্যাডভারসারিজ থ্রো স্যাঙ্কশনস অ্যাক্ট’ আইন জারি করে। এ আইন অনুযায়ী, কোনো দেশ রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জাম কিনলে সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। এই আইন অমান্য করে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার চুক্তি করে আমেরিকার রোষানলে পড়ে ভারত। রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনলে ভারত আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে মর্মে মার্কিন কংগ্রেসের গবেষণাভিত্তিক একটি সংস্থার প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ‘কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস)।’ বিভিন্ন বিষয়ে কংগ্রেস সদস্যরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সে ব্যাপারে সংস্থাটি গবেষণা ভিত্তিক পরামর্শ দিয়ে থাকে। সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই বড় দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধিত্ব থাকে।
দেড় বছর আগেও এ ইস্যুতে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ট্রাম্প প্রশাসন তখন দিল্লিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, ‘রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনলে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়বে ভারত। এবার কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস)-এর প্রতিবেদনেও একই ধরণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো।
সম্ভাব্য এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিরক্ষা সহযোগী-র মর্যাদা হারাতে পারে ভারত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদন-সহ নানা সহযোগিতা সত্ত্বেও ভারত আরও দ্রুততার সঙ্গে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংগ্রহে তৎপর রয়েছে।’
মার্কিন কংগ্রেসের গবেষণামূলক শাখা কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস) তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো প্রযুক্তি শেয়ার এবং সহ-উৎপাদন উদ্যোগের ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার প্রতিরক্ষা নীতিতে সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে।’
রাশিয়ার কাছ থেকে দূরপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ কিনেছে ভারত। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপারে শুরু থেকেই আপত্তি আছে পেন্টাগনের। বিশেষত যেসব দেশ মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে, তাদের এটি না কেনার চাপ আছে। এটি কিনে ইতোমধ্যেই নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে তুরস্ক।
২০০৭ সালে প্রথম রুশ বাহিনীতে এস-৪০০ অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৪ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করে দিল্লি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে এমন সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ২০১৮ সালের অক্টোবরে ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০ কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে ভারত। এরমধ্যে ২০১৯ সালে চুক্তির জন্য প্রথম ধাপে ভারত প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, সিআরএস-এর প্রতিবেদন মার্কিন কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিবেদন নয়। এটি সরাসরি কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন নয়। তবে আইনপ্রণেতারা যেন বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেজন্য সংস্থাটি বিষয়টি সম্পর্কে তাদের অবহিত করে থাকে।
সম্প্রতি ভারতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের দিল্লি-মস্কো সখ্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেন। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় ইতোপূর্বে তুরস্কের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞারও সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বাইরে অন্য কোনো একতরফা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া স্বীকার করে না। এটি তুরস্ক বা ভারত উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতের বাইরে গিয়ে তারই চিরশত্রু রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত অস্ত্র কিনলে তুরস্কের মতো ভারতও নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে। এতে ভারতের প্রতিবেশি দেশ চিরশত্রু পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক আরো ঘনীভূত হতে পারে এবং ফলস্বরুপ দুই দেশের(ভারত-পাকিস্তান) মধ্যকার বিবাদ যেকোনো সময় যুদ্ধে রুপ নিতে পারে। তারা মনে করেন, আমেরিকার মতের বাইরে যারাই গিয়েছে বিভিন্ন ছল-ছুতোয় সেই দেশটি নিয়ে আমেরিকা সবসময়ই গোপন ষড়যন্ত্র করে থাকে এবং বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত সহ হিতে বিপরীতের মতো ঘটনাও ঘটেছে। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে এবং সেখানে আমেরিকার হাত না থাকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪০
আপনার মতামত জানানঃ