ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ
মর্মান্তিক ক্যামিকেল শিল্প দুর্ঘটনায় ভিকটিম ব্লেইমিং নয়। শুধু একটা কথাই বলতে চাই, দ্য কস্ট অফ চিপ ডেভেলপমেন্ট ইস ডিভাস্টেটিং।
দেশের ক্ষতি, মালিকের ক্ষতি, শ্রমিকের ক্ষতি, প্রাণ ও জানের অপচয়। বাংলাদেশে ‘জান’ খরচযোগ্য। এবং আমাদের সরকার ও বেসরকারি খাতের শিক্ষা হবে না। নিমতলি, চুড়ি হাট্রার ক্যামিকেল আগুন নেভানো থেকে সরকার ও ফায়ার সার্ভিস শিক্ষা নেয়নি, শিক্ষা নেয়নি মালিক পক্ষ। আমাদের যে কোন মূল্যে চাই ‘সস্তা উন্নয়ন’ করতেই হবে। আমদের টেকসই উন্নয়ন দরকার নাই।
চট্রগ্রামে বিএম গ্রুপ/স্মার্ট গ্রুপের সুনাম শুনেছি। কিন্তু ডিপোতে হাইড্রোজেন গুদাম বিষয়ে তথ্য মালিক পক্ষ ফায়ার সার্ভিসকে না জানিয়েই ভেগেছে, ১৬ ঘন্টায় আগুন নেভানো যায়নি। ফায়ার ক্যামিকেল গুদামের আগুনে পানি ঢালতে গিয়ে বিস্ফোরনের মাত্রা বেড়েছে। মালিক পক্ষের লুকোচুরি এবং ফায়ার সার্ভিসের পানি দিয়ে আগুন নেভানোর একমুখী অসারতা দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়িয়েছে। এটা চলছেই, চলতেই থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের উপকরণ দরকার নাই, ট্রেনিং এর দরকার নাই। ট্রেনিং করবে তাদের বস, দরকার বসের বিদেশ ভ্রমণ, আর দরকার সকাল বিকাল ‘উন্নয়নের’ জিকির।
শুনেছি ইনফ্লেইমেবল রায়সায়নিক পদার্থের আগুন নেভানোর কিছু জিনিসপত্র ডিপোতে ছিল, কিন্তু সেসব মেয়াদউত্তীর্ণ ছিল এপ্রিল ২০২১ এ। এবং ডিপোটি আইএসও সার্টিফাইড। তবে ডিপোতে রাসায়নিক গুদাম বা ‘ ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড’ গুদামের অনুমোদন ছিল না। বাংলাদেশে কোথাও অনুমোদন থাকে না, এভাবেই বাংলাদেশের শিল্প ও উন্নয়ন চলে। ‘লাইসেন্স’ কিংবা অনুমোদন নেই এটা শুধু বহু মানুষ মারা যাবার পরে জানা যায়, একেবারে লঞ্চ, জাহাজ থেকে শুরু করে মিল ফ্যাক্টরি এবং গুদাম সর্বত্র, অথচ প্রশাসনের এসব জানা। দায়মুক্তির জন্য ‘লাইসেন্স’ কিংবা অনুমোদন না থাকাটা খুব যুতসই যুৎসই!
বার বার একটা কথা বলি, প্রতিষ্ঠান ও রেগুলেশান তৈরির আগে সরকারি বেসরকারি ‘সস্তা’ উন্নয়নের দাম খুব বেশি। এটা প্রি ম্যাচিউর উন্নয়ন। এর ফলাফল ভয়ানক।
হয়ত প্রাসঙ্গিক নয়, তথাপি একটা কথা না বললেই নয়, বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যবসায়ীরা ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড’ বিদেশে রপ্তানি করে। আগে ভারতে করত, পাকিস্তানে করে, আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানির চেষ্টা আছে। তবে এই খাতের উপর শকুনের দৃষ্টি আছে। ভারত বাংলাদেশের ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড’ এর উপর এটি ডাম্পিং নীতি প্রয়োগ করে খাতটিকে বসিয়ে দিতে চেয়েছে। নতুন বলছি না, প্রথম আলোতেও ২ বার প্রাসঙ্গিকভাবে বিষয়টা এসেছে আমার লেখায়। তাই বলি উন্নয়ন করেন, কিন্তু টেকসই করেন, প্রতিষ্ঠান গড়েন, রেগুলেশান করেন। সেইফটি দেখেন। ঝুঁকি আবিষ্কার করেন। এসব কথা বললেই, তাকে সমালোচনা হিসেবে না দেখে ‘রিস্ক এসেস্মেন্ট’ হিসেবে দেখেন। আর পাশাপাশি ”স্যাবটাজের’ সম্ভাবনাও উড়ায়ে দিয়েন না। সস্তা উন্নয়নের জ্বালা বড় কঠিন!
আপনার মতামত জানানঃ