দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসা অব্যাহত রয়েছে। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ মাদারীপুরে পুলিশের দুই সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সুজন শেখ (২৮) নামে এক ব্যবসায়ী। বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মাদারীপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মাহাবুব (৪৫), কনস্টেবল সোহাগ (৩৫) এবং সূর্যনগর বাজারের টুম্পা টেলিকমের মালিক টোকন বেপারী (৪৫)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৩টার দিকে পদ্মাসেতু ভ্রমণ করে মোটরসাইকেলযোগে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন ব্যবসায়ী সুজন। মাঝপথে মাদারীপুরের শিবচরের সূর্য্যনগর এলাকায় আসলে সুজন মোটরসাইকেল থামিয়ে রাস্তার পাশের একটি দোকানে চা পান করছিল। এ সময় সাদা পোশাকে থাকা দত্তপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এএসআই মাহাবুব ও কনস্টেবল সোহাগ মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চান। সুজন কাগজপত্র দেখালে তা সঠিক নয় উল্লেখ করে ওই দুই পুলিশ সদস্য এটি চোরাই মোটরসাইকেল বলে দাবি করে। পরে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ওই দুই পুলিশ সদস্য। সুজন চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সুজনকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখায় মাহাবুব ও সোহাগ। পরে সুজনের সাথে থাকা বিকাশের টাকা পাশের টোকান বেপারীর দোকানে গিয়ে মোবাইল থেকে বেশ কয়েকটি ম্যাসেজের মাধ্যমে এক লাখ ১০ হাজার টাকা তুলে নেয় ওই দুই পুলিশ সদস্য। পরে এ ঘটনা কাউকে যেন না বলে সুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই শিবচর থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ কোনো পরামর্শ না দিয়ে চলে যেতে বলে। পরবর্তীতে সুজন শেখ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাঈদুর রহমান এর আদালতে মামলটি করেন। মামলাটির শুনানি শেষে বিচারক পরবর্তী তারিখের জন্য দিন ধার্য রেখেছেন।
মামলার বাদী সুজন শেখ জানান, কোনো কারণ ছাড়াই মোবাইল থেকে বিকাশের মাধ্যমে নগদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা তুলে নেয় ওই দুই পুলিশ সদস্য। যার প্রমাণ আদালতে মামলার নথির সাথে দেওয়া হয়েছে। মূলত তারা ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এই টাকা নিয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত এএসআই মাহাবুব রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি বানোয়াট ঘটনা। অভিযুক্ত কনস্টেবল সোহাগ মিয়া বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে আমাদের ডিউটি ছিল না। আমরা চা খেতে ওই বাজারে গিয়েছিলাম। আমি চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। তখন সেখানে একটি মোটরসাইকেল এসে থামলে আমার স্যার চালকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু, আমি কারো সঙ্গে কথা বলিনি। আমি দূর থেকে দেখছিলাম। এর বেশি আমি জানি না। প্রায় ১০ মিনিট পরে মোটরসাইকেলের চালক চলে যান। আজ মামলার বিষয়টি জেনে আমি অবাক হয়েছি।
শিবচরের দত্তপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ এমদাদুল হক বলেন, ওই ব্যবসায়ীর সাথে আমাদের তদন্তকেন্দ্রের দুই পুলিশ সদস্যের ভুলবুঝাবুঝি হয়েছে। এর কারণেই ব্যবসায়ী আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আমাদের বড় অফিসাররা রয়েছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. আব্দুল হান্নান জানান, ব্যক্তিগত কোনো দায়ভার বাংলাদেশ পুলিশ নিবে না। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, মামলার কপি হাতে পেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, আইনের রক্ষক হয়ে যখন একজন পুলিশ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, একজন অপরাধীর চেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া উচিত। অথচ আমাদের দেশে সম্পূর্ণই এর বিপরীত। অপরাধ জগতের ডন হয়েও শাস্তি পায় সাময়িক বরখাস্ত ও পুলিশ লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। এএসআই মাহাবুব রহমান ও কনস্টেবল সোহাগ মিয়া সহ আরো যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২৩০০
আপনার মতামত জানানঃ