জেলা, মেট্রোপলিটন, প্রশিক্ষণ ও রিজার্ভ বাদে পুলিশের মূল ইউনিট ১৩টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই গঠিত হয় আওয়ামী লীগের বিগত আমলে। পুলিশের এসব ইউনিট অপরাধ দমনে এখনো তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
জেলা, মেট্রোপলিটন, প্রশিক্ষণ ও রিজার্ভ বাদে পুলিশের মূল ইউনিট ১৩টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই গঠিত হয় আওয়ামী লীগের বিগত আমলে। পুলিশের এসব ইউনিট অপরাধ দমনে এখনো তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। কেবল কারেন্ট জাল ও মাদক উদ্ধারের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। রাজনৈতিক নেতাদের অর্থ তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে পুলিশের অতিরিক্ত এসব ইউনিট গঠন করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পুরো বাহিনীর সংস্কারের সঙ্গে নতুন করে পুলিশের ইউনিটগুলোর মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, পুলিশের মূল অপারেশনাল ইউনিট রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর, বিশেষ শাখা (এসবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পুলিশ টেলিকম, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, পুলিশ স্টাফ কলেজ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ), বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ইউনিট। জেলা পুলিশের ৬৪টি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছয়টি, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার ৩০টি, এপিবিএন ২০টি এবং রিজার্ভ ফোর্স আরআরএফের সাতটি ইউনিট রয়েছে। রেঞ্জ অফিসের আটটি ইউনিট, মেট্রোপলিটনের আটটি ইউনিট, হাইওয়ের নয়টি, রেলওয়ের সাতটি, শিল্পাঞ্চলের নয়টি ইউনিট, বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টার ও পিএসটিএসের একটি করে দুটি ইউনিট রয়েছে। সব মিলিয়ে এখানে পুলিশের ১৭০টি ইউনিট। এর সঙ্গে মূল ১৩টি ইউনিট যোগ করলে বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ইউনিট রয়েছে সর্বমোট ১৮৩টি।
পুলিশের সরাসরি অপারেশনাল কাজে যুক্ত ১৩টি ইউনিটের মধ্যে ছয়টি ইউনিটই গঠন করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত আমলে। ২০১০ সাল পরবর্তী সময়ে গঠিত এসব ইউনিটের মধ্যে রয়েছে পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, এটিইউ, বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর এবং এমআরটি ইউনিট।
মূলত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ২০১১ সালে পুলিশ অ্যাক্টের একটি ধারার ক্ষমতাবলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে পিবিআই গঠিত হয়। বাংলাদেশ পুলিশের একটি আধুনিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা হিসাবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে। এরপর রাজনৈতিক মামলার তদন্ত এবং বিভিন্ন নাশকতার মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় এ ইউনিট। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অভিযোগও রয়েছে এ ইউনিটের বিরুদ্ধে।
নদীপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে নৌ-পুলিশ। এখন পর্যন্ত অপরাধ দমনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দৃশ্যমান হয়নি। কেবল কারেন্ট জাল উদ্ধারের মধ্যেই কার্যত সীমাবদ্ধ পুলিশের এ ইউনিটের কার্যক্রম। বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষ শাখা হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত করা ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ। ১১টি রিজিয়ন ৩০টি জেলায় ৩৯টি জোনে বিভক্ত হয়ে ৬৪টি অফিসের মাধ্যমে ১০২টি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
শিল্প এলাকায় অশান্তি প্রতিরোধকল্পে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহপূর্বক সম্ভাব্য শ্রম অসন্তোষ মোকাবেলার উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর শিল্প পুলিশ যাত্রা শুরু করে। তবে এ যাবৎ শিল্প এলাকায় অসন্তোষ প্রতিরোধে এ ইউনিটের কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। বরং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের পক্ষ নিয়ে নানা সময় শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিটের বিরুদ্ধে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয় অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। বেশকিছু জঙ্গিবিরোধী অভিযান এটিইউ পরিচালনা করলেও সেগুলো নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। অনেকই মনে করেন সেগুলো ছিল সাজানো ‘জঙ্গি নাটক’। আবার অনেকের মতে, এটিইউ ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শ দমনের প্রধান হাতিয়ার।
গত বছরের ২৪ মে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত মেট্রো পুলিশ গঠনের অনুমোদন দেয় সরকার। পুলিশের একজন উপমহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে চলছে এর কার্যক্রম। তিন শিফটে প্রতিটি স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে ১১ জন করে পুলিশ সদস্য। আপাতত এর লোকবল ৫৩৭। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ২৪ মার্চে এ ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পুলিশের ছয়টি ইউনিট গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। মূলত পদোন্নতি ও নিয়োগ বাণিজ্যেরও হাতিয়ার ছিল এ ইউনিটগুলো। তবে এত বেশি ইউনিট গঠন করা হলেও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তার কোনো প্রভাব দৃশ্যমান নয়। অবশ্য পুলিশ সদর দপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এসব ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশেষায়িত ইউনিটগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও সরঞ্জাম রয়েছে। এ ইউনিটগুলো নিয়মিত তাদের অধিক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে চলেছে।’
আপনার মতামত জানানঃ