ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যাপিটলের দাঙ্গা উসকে দিয়েছিলেন এবং দোষী সাব্যস্ত না হলে তিনি আবার এমনটি ঘটাতে পারেন বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার সেনেটে কিছু নতুন ফুটেজ দেখান ডেমোক্র্যাটরা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রাণ হাতে নিয়ে ক্যাপিটল থেকে পালাচ্ছেন। পিছনে উত্তেজিত জনতা তাদের ধাওয়া করেছে। এই ফুটেজ প্রথম জনসমক্ষে আনা হলো।
বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচারে ডেমোক্র্যাট কৌঁসুলিরা ওই সহিংসতার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক তুলে ধরতে দাঙ্গাকারীদের বলা কথা ব্যবহার করেছেন, পাশাপাশি এই দাঙ্গায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন; জানিয়েছে বিবিসি। তাদের মামলা এগিয়ে নিতে ডেমোক্র্যাটরা পুলিশ, ক্যাপিটলের কর্মী, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও বিদেশি গণমাধ্যমের বর্ণনাও উপস্থাপন করেছেন। নিজেদের চূড়ান্ত বক্তব্য হিসেবে তারা বলেছেন, ট্রাম্প সম্পদ, জনগণ ও গণতন্ত্রের ক্ষতি করেছেন।
ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, এর আগেও জনতাকে উত্তেজিত করেছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের পর থেকেই গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছেন তিনি। জনতাও উত্তেজিত করেছেন। তারই ফলস্বরূপ ক্যাপিটলের ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার অভিশংসন বিচারের মুখে পড়তে হয়েছে ট্রাম্পকে। এর আগে মার্কিন কংগ্রেসে অভিশংসিত হলেও সেনেটে বেঁচে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। এবারেও মার্কিন কংগ্রেস তাকে অভিশংসন করেছে। সেনেটে শুরু হয়েছে বিচার পর্ব। সেনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে ট্রাম্পকে ইমপিচ করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য ১৭ জন রিপাবলিকান সেনেটরকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে। এখনো পর্যন্ত ১১ জন রিপাবলিকান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ডেমোক্র্যাটদের বক্তব্য, ট্রাম্পকে যদি অভিশংসন করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আবার তিনি ভোটে দাঁড়াতে পারবেন এবং জয়ী হয়ে ফের মার্কিন প্রেসিডেন্টও হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ফের মার্কিন গণতন্ত্র প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে সে কারণেই তাকে ইমপিচ করা উচিত। ট্রাম্প এর মধ্যেই ক্ষমতা হারিয়েছেন। তিনি এখন আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন। এরপরেও যদি তাকে ইমপিচ করা হয়, তাহলে আর কখনো প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়তে পারবেন না তিনি।
বৃহস্পতিবার জো বাইডেনও ইমপিচমেন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। তার বক্তব্য, বিষয়টি থেকে তিনি দূরে থাকতে চাইছেন। একটিও লাইভ ট্রায়াল তিনি দেখেননি। তবে খবর দেখছেন। খবরেই ক্যাপিটল হামলার নতুন ফুটেজ দেখেছেন। তার বক্তব্য, দেশের মানুষ সবই দেখছেন। কীভাবে জনতাকে উত্তেজিত করা হয়েছিল, তা সকলের কাছে এখন পরিষ্কার। বাইডেন জানিয়েছেন, বিচারপর্ব শেষ হলে এ বিষয়ে তিনি তার বক্তব্য জানাবেন। তবে এদিন তিনি বলেছেন, নতুন ফুটেজ দেখে রিপাবলিকানদেরও নিশ্চয় মত বদল হবে।
কৌঁসুলি ডেভিড সিসিলিনি জানান, কিছু দাঙ্গাকারী স্বীকার করেছে তারা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল আর আইনপ্রণেতারা যেখানে লুকিয়ে ছিলেন সেই বেইসমেন্ট সিল করে দিয়ে গ্যাস চালু করে দেওয়ারকথা বলাবলি করছিল অন্যরা। তিনি বলেন, আমাদের কেউ কখনো কল্পনাও করেনি যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পাঠিয়ে দেওয়া একদল দাঙ্গাবাজের কারণে আমরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারি। ডেমোক্র্যাট কৌঁসুলিদের যুক্তিপর্ব শেষ হওয়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবীরা শুক্রবার তাদের যুক্তি তুলে ধরেছেন।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলছেন, গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে জালিয়াতিপূর্ণ বলে ঘোষণা করার সময় ট্রাম্প তার বাক স্বাধীনতার অধিকার ব্যবহার করেছেন।
ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে ১০০ আসনের সেনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। কিন্তু সেনেটে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের আসন সংখ্যা ৫০-৫০ হওয়ায় এ ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট সদস্যের সঙ্গে আরও অন্তত ১৭ জন রিপাবলিকান সদস্যের সমর্থন লাগবে। এখনও পর্যন্ত রিপাবলিকান সেনেটরদের অধিকাংশই ট্রাম্পের প্রতি বিশ্বস্ত থাকায় সেটি সম্ভব হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্প খালাস পাবেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১৩৫
আপনার মতামত জানানঃ