বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘিরে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তাঁর দল ও সমর্থকেরা আসন্ন নির্বাচন বয়কট করবেন। বুধবার তিনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ঘোষণা দেন।
হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারের নির্বাচনী বৈধতা থাকা দরকার। লক্ষ লক্ষ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে তাঁরা ভোট দেবেন না। আপনি কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এত মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে পারেন না।” তিনি আরও জানান, তিনি সমর্থকদের অন্য কোনো দলকে সমর্থন করতে বলবেন না। তবে তাঁর আশা, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকারের দাবি, দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত চলছে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বছরের মে মাসে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও বাতিল করে।
রয়টার্সের সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা এসব সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা যদি ভোট না দেন, তাহলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে যাবেন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে ব্যাপক জনবিক্ষোভের পর তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। সে সময় হাসিনা পদত্যাগ করে বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাঁর প্রত্যাবর্তনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। ভারত সে অনুরোধের প্রাপ্তিস্বীকার করলেও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
দেশে ফেরার বিষয়ে হাসিনা বলেন, “যত দিন বাংলাদেশে বৈধ সরকার ও সাংবিধানিক ব্যবস্থা থাকবে, তত দিন দেশে ফিরতে চাইব।” তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকুক বা বিরোধী দলে—বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। দলের নেতৃত্ব তাঁর হাতে থাকা বাধ্যতামূলক নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যদিকে, হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও বিরোধীদের দমন-পীড়নের অভিযোগে মামলা চলছে। এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আদালতে নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগও পাননি। আগামী ১৩ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা।
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবারও উত্তেজনা বাড়ছে। একদিকে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ভোটের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
আপনার মতামত জানানঃ