জার্মানিতে গত বছর দুই লাখ ১৪ হাজার সহিংস অপরাধ ঘটেছে৷ সামগ্রিকভাবেও অপরাধ বেড়েছে। এটা ছিল জার্মানিতে সহিংস অপরাধের নতুন রেকর্ড৷ শনিবার পুলিশের প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷
জার্মানির ভেল্ট আম সনটাগ পত্রিকা শুধু সেই তথ্য পেয়েছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, গতবছর সহিংস অপরাধের ঘটনা আগের চেয়ে ৮ দশমিক ৬ ভাগ বেড়েছে যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ পুলিশ মোট দুই লাখ ১৪ হাজার ৯৯টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে৷
এরমধ্যে গুরুতর এবং শারীরিক ক্ষতি হয়েছে এমন অপরাধের ঘটনা রয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার পাঁচশো ৪১টি যা একবছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ৷
সামগ্রিকভাবে জার্মানিতে অপরাধ ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ৫ দধমিক ৫ ভাগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৪ মিলিয়নে৷ এই সংখ্যা করোনা পূর্ববর্তী সময়, মানে ২০১৯ সালের তুলনায় ৯ দশমিক ৩ ভাগ বেশি৷
একই সময়ে সন্দেহভাজন অপরাধী গ্রেপ্তারের হার ৭ দধমিক ৩ ভাগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.২৪৬ মিলিয়নে৷ এই সন্দেহভাজনদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৩ ভাগ মানুষের জার্মান পাসপোর্ট নেই৷
জার্মান পাসপোর্ট নেই এমন মানুষদের মধ্যে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৪০২,৫১৪ জন শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী কিংবা জার্মানিতে অনিয়মিত পথে প্রবেশ করেছেন৷
গতবছর জার্মানিতে অনুমতিব্যতিত প্রবেশের অপরাধ আগের বছরের তুলনায় ৪০ ভাগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার একশো ৫৮তে৷ আর অনুমতিব্যতিত জার্মানিতে অবস্থানের হার ২৯ ভাগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৭ হাজার ৫৯টিতে৷
নথিভুক্ত অপরাধের এক তৃতীয়াংশই (১.৯৭১ মিলিয়ন) চুরির ঘটনা যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ১০ দধমিক ৭ ভাগ৷
বার্লিনে চুরির ঘটনা সবচেয়ে বেড়েছে৷ আগের বছরের তুলনায় রাজ্যটিতে এই অপরাধ বেড়েছে ৩৫ দশমিক ২ ভাগ৷
জার্মানির রাজধানী যে রাজ্যে সেই রাজ্যটি অন্যান্যা অপরাধেও শীর্ষে রয়েছে৷ গতবছর সংঘটিত অপরাধের কথা বিবেচনা করলে রাজ্যটি এখন জার্মানির মধ্যে বসবাসের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল৷ তারপরেই রয়েছে ব্রেমেন, হামবুর্গ এবং সাক্সনি আনহাল্টের অবস্থান৷
পুলিশের পরিসংখ্যান আরো জানাচ্ছে, গতবছর যেসব অভিযোগ জমা হয়েছে তার মধ্যে ৫৮ দধমিক ৪ ভাগ সমাধান হয়েছে৷
অপরাধ বাড়ার নানা কারণ বলছে রাজনীতিবিদরা। জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যের্বার্ট রয়েল মনে করেন, জার্মান সমাজের মানসিকতায় পরিবর্তন আসায় অপরাধ বাড়ছে৷
তিনি বলেন, ‘‘আলোচনার বদলে শক্তি প্রয়োগ করে সংঘাত দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে৷ কলহও সংক্ষিপ্ত হচ্ছে৷”
গাজা এবং ইউক্রেন যুদ্ধও সমাজে বিভাজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘এটা বিপজ্জনক পরিস্থিতির মতো৷”
হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানো এবং পরবর্তীতে ইসরায়েল প্রতিশোধ নিতে গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরুর পর জার্মানিতে রেকর্ড হারে ইহুদিবিদ্বেষ এবং ইসলামভীতি বেড়েছে৷
অপরাধ বাড়ার অন্যান্য কারণও বিবেচনায় এনে লোয়ার সাক্সনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানিয়েলা বেহরেন্স বলেন, ‘‘এটা ধারনা করা যেতে পারে যে সহিংস অপরাধ বৃদ্ধির হারকে শুধু করোনা মহামারী পরবর্তী পরিস্থিতি দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়৷”
মূল্যস্ফীতি, মহামারির পর যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং অভিবাসনের মতো বিষয়গুলো অপরাধ বৃদ্ধির বিশ্বাসযোগ্য কারণ বলে মনে করেন জার্মানির মধ্যবামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দলের এই রাজনীতিবিদ৷
আপনার মতামত জানানঃ