জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ম্যানহেইমের একটি বিপণী বিতানের চত্বরে ছুরি হামলায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জন আহত হন। এরপর গতকাল জানা গেছে, আহত ওই পুলিশ কর্মকর্তা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
দেশটির বাডেন ভুয়ের্টেমবার্গ রাজ্য পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার মানমাইমের কেন্দ্রস্থলের একটি মার্কেট চত্বরে ২৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। এতে ছয়জন গুরুতর আহত হয়৷
“তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তার মাথায় বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন,” বিবৃতিতে বলেছে পুলিশ।
আহতদের মধ্যে ইসলামবিরোধী একটি সংগঠনের নেতা মাইকেল স্টার্জেনবার্গারও রয়েছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। ঘটনার সময় তিনি সেখানে একটি সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাকারী এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করছেন, সে সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা এগিয়ে গেলে তাকেও ছুরি মারা হয়। পরে আরেক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে আহত হন হামলাকারী।
এই হামলার ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে বর্ণনা এবং আহতদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এক্স বার্তায় বলেছেন, “আমাদের গণতন্ত্রে সহিংসতা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।”
ঘটনার পরপরই ম্যানহেইমের পুলিশ ‘বড় ধরনের অভিযান’ শুরু এবং আহতদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টার পাঠানোর কথা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে এক ব্যক্তি ছুরি নিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। পরে তাকে দমাতে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে।
উগ্র ডানপন্থী ইসলামবিরোধী কর্মী মাইকেল স্টার্জেনবার্গার এবং তার সংগঠন সিটিজেনস মুভমেন্ট প্যাক্স ইউরোপা (বিপিই) ওই বিপণী বিতানের চত্বরে একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিল। ওই সময়ই হামলার ঘটনা ঘটে।
ম্যানহেইম শহর কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সিটিজেনস মুভমেন্ট প্যাক্স ইউরোপা (বিপিই) শুক্রবার সকালে সমাবেশের আয়োজন করেছিল।
বিপিইর পক্ষ থেকে বিল্ড পত্রিকাকে নিশ্চিত করা হয়েছে, স্টার্জেনবার্গারের পায়ে এবং মুখে আঘাত করা হয়েছে।
তার সহকর্মী স্টেফানি কিজিনা আরও বলেছেন, স্টার্জেনবার্গারের অস্ত্রোপচার করতে হবে, তবে তার জীবন নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেই। হামলাটি যেহেতু সমাবেশের আগে হয়েছে তাই তিনি ধারণা করছেন এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত।
হামলায় আহতদের সম্পর্কে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি পুলিশ। স্থানীয় সংবাদপত্র ম্যানহেইমার মরজেন জানিয়েছে, হামলায় আহতদের মধ্যে পাঁচজন বিপিই সদস্য।
পুলিশ সন্দেহভাজন হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ না করলেও জার্মান গণমাধ্যমগুলো বলছে, ২৫ বছর বয়সী ওই যুবক আফগানিস্তানে জন্মগ্রহণ করলেও জার্মানিতে বসবাস করে।
হামলার কারণ নিশ্চিত হওয়া না গেলেও জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফাইজার বলেছেন, হামলাটি ইসলামপন্থীদের হতে পারে ।
কে এই মাইকেল স্টার্জেনবার্গার?
বিল্ড বলছে, মাইকেল স্টার্জেনবার্গার একটি ইসলাম বিরোধী ব্লগের লেখক। পাশাপাশি জার্মানিতে ‘ইসলামিকরণের’ বিরুদ্ধে কাজ করা সংগঠন বিপিইর সদস্য তিনি।
৫৮ বছর বয়সী স্টার্জেনবার্গার মুসলিমবিরোধী প্ল্যাটফর্ম পিআই-নিউজের লেখালেখি করেন। বাভারিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতেও আছেন তিনি।
সাবেক রাজনীতিবিদ স্টর্জেনবার্গার একসময় ডানপন্থী দল ডি ফ্রেইহাইটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা ২০১৬ সালে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এর আগে তিনি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) সহযোগী সংগঠন ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়নের (সিএসইউ) সদস্যও ছিলেন।
আপনার মতামত জানানঃ