সুইডেনে গত এক মাসে অন্তত তিনবার কোরান পোড়ানোর পেছনে ছিলেন ইরাকি শরণার্থী সালওয়ান মোমিকা৷ এদিকে, ডেনমার্কেও ইসলামবিরোধী অ্যাকটিভিস্টরা সাম্প্রতিক সময়ে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআনের কয়েকটি কপি পুড়িয়েছেন। এতে মুসলিম বিশ্বে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তারা এমন কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে ওই দেশ দুটির প্রতি দাবি জানিয়েছে।
দুই দেশের সরকারই পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে, এটি বন্ধ করার জন্য নতুন আইন তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু এমন পরিকল্পনার সমালোচকেরা বলছেন, দুই দেশের সংবিধানে বাক্স্বাধীনতা দেওয়া আছে এবং সেটি পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ ওই স্বাধীনতাকে খর্ব করবে।
সুইডেনে গত এক মাসে অন্তত তিনবার পবিত্র কোরআন পোড়ানোর পেছনে ছিলেন ইরাকি শরণার্থী সালওয়ান মোমিকা। তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে চান এবং কোরআনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চান।
একই সময়ে ডেনমার্কে ড্যানিশ প্যাট্রিয়টস নামের একটি চরম ডানপন্থি গোষ্ঠী তাদের মুসলিমবিরোধী বিক্ষোভের সংখ্যা বাড়িয়েছে। নরডিক দেশগুলোতে ‘ইসলামাইজেশন’ চলছে বলে তারা মনে করেন।
গত সপ্তাহে ডেনমার্কে অন্তত ১০ কপি কোরআন পোড়ানো হয়েছে। ড্যানিশ-সুইডিশ চরম ডানপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট রাসমুস পালুডেন ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে আসছেন। তিনি বলেন, সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করায় তিনি তুরস্কের ওপর ক্ষুব্ধ।
বিশ্বের অন্যতম ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পড়ে ডেনমার্ক ও সুইডেন। দেশ দুটি বলেছে, মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে তারা পবিত্র কোরআন পোড়ানোর বিষয়টি আইনগতভাবে সীমিত করা যায় কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছে।
ড্যানিশ ও সুইডিশ সরকার বলছে, বাক্স্বাধীনতার বিষয়টি ইতিমধ্যে কিছুটা সীমিত অবস্থায় আছে। কারণ, জাতি ও জেন্ডার বিচারে কাউকে অবমাননা করা অবৈধ।
তবে পবিত্র কোরআন পোড়ানো নিষিদ্ধ করা যায়, এমন কোনো আইন ওই দুই দেশে নেই। সুইডেন ১৯৭০ সালে ব্লাসফেমি আইন বাতিল করেছে। ডেনমার্ক করেছে ২০১৭ সালে।
সুইডেনে বিক্ষোভের স্থলে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে পুলিশ বিক্ষোভের আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে। আর ডেনমার্কে বিক্ষোভের বিষয়টি শুধু পুলিশকে অবহিত করলেই চলে।
জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার আইনে কোনো পরিবর্তন আনা যায় কি না, সেটি পরীক্ষা করে দেখছে সুইডেন। তবে ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ানো অবৈধ করার বিষয়টি তারা উড়িয়ে দিয়েছে।
বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ
সুইডেনে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের কপি পোড়ানোর এক ঘটনার প্রতিবাদে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের সুইডিশ দূতাবাসে একদল লোকের জোর করে ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার স্টকহোম শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদের বাইরে কোরআনের একটি কপিতে আগুন ধরিয়ে দেয় এক ব্যক্তি।
তার নাম সালওয়ান মোমিকা এবং সে সুইডেনে বসবাসরত একজন ইরাকি বলে জানানো হয়েছে। তুরস্ক, ইরাক, ইরান, মিসর, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করে।
ইরাকের একজন ক্ষমতাধর ধর্মীয় নেতা মোকতাদা আল-সদর এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর ডাক দিলে বৃহস্পতিবার রাজধানী বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসের সামনে একদল লোক জড়ো হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে বেশ কিছু লোককে ভবনটির প্রাঙ্গণে হাঁটতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির একজন ফটোসাংবাদিক বলেছেন, কিছু লোক দূতাবাস ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং প্রায় ১৫ মিনিট সেখানে অবস্থান করে। পরে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী আসার পর তারা সেখান থেকে চলে যায়।
সুইডেনের কর্তৃপক্ষ বলছে, মোমিকাকে দেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত আইনের আওতায় মসজিদের বাইরে প্রতিবাদ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটার পর পুলিশ বলছে, তারা এখন ঘৃণা উসকে দেওয়ার দায়ে ঘটনাটির তদন্ত করছে।
তুরস্ক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে এ ধরনের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ‘উদ্ধত পশ্চিমাদের আমরা একসময় শিক্ষা দেব যে মুসলিমদের অপমান করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়।
মরক্কো ও জর্দান এ ঘটনার প্রতিবাদে স্টকহোম থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের দেশে ফিরে আসতে বলেছে। মরক্কোর রাবাতে সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে তলবও করা হয়। মিসর বলেছে, যখন মুসলিমরা ঈদুল আজহা পালন করছে, তখন এই লজ্জাজনক ঘটনা বিশেষভাবে উসকানিমূলক।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উল্ফ ক্রিস্টারসন বলেছেন, এ ঘটনা ‘আইনগতভাবে বৈধ হলেও অনুচিত’ ছিল।
সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে এর আগে দাঙ্গা হয়েছে। ন্যাটো সদস্য তুরস্ক এর আগে সুইডেনকে এ জোটের সদস্য পদ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেনি এবং এর একটি কারণ হিসেবে এ ধরনের ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে।
এসডব্লিউএসএস/২২১৫
আপনার মতামত জানানঃ