সুইডেনে কট্টর ডানপন্থীদের পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা ও সমালোচনায় মুখর মুসলিম বিশ্ব। এর মধ্যেই এবার ডেনমার্কে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের পাশে একটি মসজিদের সামনে ও দেশটিতে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে এসব ঘটনা ঘটেছে। খবর আল-জাজিরার।
কোপেনহেগেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় যুক্ত ছিলেন রাসমুস পালুদান নামের এক ব্যক্তি। তিনি ডেনমার্কের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দল হার্ড লাইনের নেতা। ২১ জানুয়ারি সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পবিত্র কুরআন পোড়ান তিনি। পালুদান সুইডেন ও ডেনমার্কের যৌথ নাগরিক।
গত বছর এপ্রিলে পালুদান ঘোষণা দেন, পবিত্র রমজান মাসে তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পবিত্র কুরআন পোড়াবেন। তার এ ঘোষণায় সুইডেনজুড়ে দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। সেই ঘোষণা মোতাবেক তিনি প্রথমে সুইডেনে, এরপর ডেনমার্কে এ কাণ্ড ঘটালেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে পালুদান ২০১৯ সালে মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনে আগুন লাগিয়ে শূন্যে ছুঁড়ে দেয়। এ ঘটনায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুই বছরের জন্য তার সুইডেনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ওই বছরের অক্টোবর মাসে জার্মানিতেও তাকে কিছু সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। উগ্র পালুদান অভিবাসন বিরোধী এবং মুসলমানদেরকে ডেনমার্ক থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে আসছে
ইউক্রেনে রুশ হামলার শুরুর পর ন্যাটোয় যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সুইডেন। তবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। এর আগে সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের নর্দার্ন রেলওয়ে স্কয়ার নামের এলাকায় অবস্থিত তুরস্কের দূতাবাস। সম্প্রতি দূতাবাসের সামনে রাসমুস পালুদান নামের এক ব্যক্তি কুরআন শরিফে আগুন দিয়েছেন। পালুদান ডেনমার্কের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দল হার্ড লাইনের নেতা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আবেদন করে দুই নরডিক রাষ্ট্র সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। কিন্তু সামরিক জোট ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য তুরস্কের অনুমোদন ছাড়া সদস্যপদ লাভ করতে পারবে না দেশ দুটি।
তুরস্কের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছিল যে, সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না সুইডেন। তার মধ্যেই সম্প্রতি তুর্কির নেতার প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর বরং কুরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটল।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেনের সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে তুরস্কের আপত্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে দেশটির উগ্র ডানপন্থীরা। আর এই বিক্ষোভে ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে সুইডেনের কট্টরপন্থিরা এই ঘটনা ঘটায়।
এই ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের সামনে সুইডেনের উগ্র ডানপন্থিদের বিক্ষোভে কুরআন পোড়ানোসহ কুর্দিদের পৃথক বিক্ষোভের ঘটনায় সুইডেনের নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। শনিবার আঙ্কারা জানিয়েছে, তারা সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একটি সফর বাতিল করে দিয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ, সৌদি আরব, জর্ডান ও কুয়েতের মতো কয়েকটি মুসলিম দেশও সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরাক, লেবাননসহ কয়েকটি দেশে এ ঘটনায় বিক্ষোভ হয়েছে।
এক বিবৃতিতে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনাকে ‘ইসলামবিদ্বেষী ও ঘৃণিত’ বলে মন্তব্য করেছে ঢাকার সুইডিশ দূতাবাস।
এসডব্লিউএসএস/১৬০
আপনার মতামত জানানঃ