বাংলাদেশের সিলেটে পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোরআন শরীফ পুড়িয়ে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটক দু’জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন সিলেট আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান নুরুল রহমান (৫০) ও একই প্রতিষ্ঠানের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানাধীন বাউলাপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে মাহবুব আলম (৪৫)। নুরুল গোলাপগঞ্জের বসন্তপুর গ্রামের মৃত ফজুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে তিনি কোতোয়ালি থানাধীন তপুবন এলাকায় বাস করেন। মাহবুব বর্তমানে সিলেট কোতোয়ালি থানাধীন ধানুহাটারপাড় এলাকায় বাস করেন।
এর আগে গত রোববার রাতে এ ঘটনায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটে নগরের আখালিয়াস্থ ধানুপাড়া আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ ও আশপাশ এলাকায়। হাজার হাজার জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওই স্কুল ঘেরাও করে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে জনতাকে সরিয়ে ওই দু’ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই স্কুলের সামনে কোরআন শরীফ পোড়ানোর দৃশ্য দেখেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এবং কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ওই স্কুলের চেয়ারম্যান নুরুর রহমান ও শিক্ষক মাহবুবুল আলমকে গণপিটুনি দেয়। পরে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান ও পুলিশ গিয়ে তাদের জনতার হাত ধরে উদ্ধার করে স্কুলের একটি কক্ষে আটকে রাখেন।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ টিম সিআরটি এবং জালালাবাদ ও কোতোয়ালি থানার অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব-৯ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ওই সময় উত্তেজিত লোকজনের একাংশ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পুলিশ ও উপস্থিত জনতার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এতে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা।
ভোরের আগে ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে পুলিশ। ওই সময় দুই শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, রোববার বিকেলে সিলেটের জালালাবাদ থানার ফতেহপুর মাদ্রাসার এক শিক্ষক এক কার্টুন ও এক বস্তা কোরআন দিয়ে যান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষকের কাছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘রোববার রাত ১০টার দিকে দুই শিক্ষক বস্তার ৪৫টি কোরআন শরিফ কেরোসিন দিয়ে পোড়াতে শুরু করেন। ওই সময় স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ও দুজনকে মারধর শুরু করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ওই এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ও জনতার হাত থেকে দুই শিক্ষককে উদ্ধার করে।
‘বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল ছুঁড়লে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। আহত পুলিশ সদস্যদেররা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
সকালে আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘কোরআন পোড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্তরা বলছে, তাদের ভুল হয়ে গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদেরকে যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ দিয়ে গেছেন, তাকে গ্রেপ্তার করলে বিষয়টি জানা যাবে।’
কোরআন শরিফ দিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কোরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনায় আটক দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি আলী মো. মাহমুদ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আটক দু’জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। রোববার রাতের ঘটনায় পুলিশের কয়েকজন সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
এসডব্লিউএসএস/১২৫০
আপনার মতামত জানানঃ