গাজীপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকা দিয়েও ভোট না পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যসহ দুই ভোটারকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে পরাজিত এক প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
রোববার (২৩ অক্টোবর) এ ঘটনার জেরে ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের ইউপি সদস্য স্বপ্না আক্তার বাদী হয়ে সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৫ জনকে আসামি করে কালিয়াকৈর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পিটুনিতে আহত হয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলার পাবুরিয়াচালা এলাকার মাজেদুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার। তিনি ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য। একই ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলামকেও পিটিয়েছেন পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম সরকার জানান, বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভোট না দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সভা শেষে যার যার মতো সবাই বাড়ি ফিরে যান। পথে কী হয়েছে বা কে কাকে মেরেছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
আহতদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলমের বাড়িতে শনিবার সন্ধ্যায় পরিষদের সকল সাধারণ ও নারী সদস্যদের তলব করা হয়।
জেলা পরিষদের সদস্য প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল, ওয়াজেদ আলী, লিটন সরকার, জয়নাল সিকদার ও নবীর হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত হন।
বৈঠকে টাকা নিয়ে জেলা পরিষদের সদস্য প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাককে কেন ভোট দেওয়া হয়নি এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বৈঠকে উপস্থিত থাকা ওই প্রার্থীর কয়েকজন সর্মথক সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য স্বপ্না আক্তার ও ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামকে মারধর করেন।
এক পর্যায়ে শফিকুল ইসলাম দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে আশপাশের লোকজন নারী সদস্যকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
নারী ইউপি সদস্য স্বপ্না আক্তার বলেন, চেয়ারম্যান তার বাড়িতে সকল সদস্যকে ডেকে নেন। আমরা সেখানে উপস্থিত হলে জেলা পরিষদের সদস্য প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাককে কেন ভোট দেওয়া হয়নি এ নিয়ে চাপ প্রয়োগ করেন। আমরা ভোট দিয়েছি বললেও আব্দুর রাজ্জাকের বেশ কয়েকজন সমর্থক আমাকে এবং আরেক সদস্যকে মারধর করেন।
জেলা পরিষদের পরাজিত প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক জানান, চেয়ারম্যানের বাড়িতে বৈঠক বসার খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান। এ সময় সবাই আমাকে ভোট দিয়েছেন শুনে আমি চলে আসি। পরে সেখানে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম সরকার জানান, বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভোট না দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সভা শেষে যার যার মতো সবাই বাড়ি ফিরে যান। পথে কী হয়েছে বা কে কাকে মেরেছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান গণমাধ্যমকে বলেন, সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৯ তারিখ প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাসাইলের পরাজিত আরও এক সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম গত মঙ্গলবার সকালে ভোটের আগে বিতরণকৃত টাকা ফেরত চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই পরাজিত ওই প্রার্থীকে টাকা গ্রহণকারী ভোটাররা তাদের নাম প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। বুধবার (১৯ অক্টোবর) নিজ উদ্যোগে তারা টাকা ফেরত দিতে শুরু করেন।
সূত্রমতে, ১১নং ওয়ার্ড (বাসাইল) সদস্য পদপ্রার্থী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ভোটের পূর্বে উপজেলার ফুলকি ইউপির ৮, হাবলা ইউপির ৫, পৌরসভার ৫, সদর ইউপির ১১, কাউলজানী ইউপির ৯, কাঞ্চনপুর ইউপির ৫ ও কাশিল ইউপির ৭ জনকে টাকা প্রদান করেন। এদের প্রত্যেক ভোটারকে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা বিতরণ করেন ওই পরাজিত প্রার্থী।
এদের মধ্যে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ার পর হাবলা, সদর, কাঞ্চনপুর, কাউলজানী ও ফুলকি ইউপির অন্তত সাতজন ভোটার ২ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। আগামী দুই দিনের মধ্যে ভোটাররা টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেছেন।
ভোটের আগে কেন টাকা বিতরণ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে পরাজিত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোটাররাই টাকা দাবি করছিলেন। তাই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লোভে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ করেছিলাম। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ার পর সকলেই টাকা ফেরত দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ওমর ফারুক বলেন, ভোট কেনা জঘন্য অপরাধ। অন্যের অধিকার টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া মানুষের মানবিক সত্তাকে হরণ করার শামিল। ভোট কেনাবেচায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন এমন অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১০০০
আপনার মতামত জানানঃ