আত্মহত্যা করার যন্ত্রকে আইনি স্বীকৃতি দিল সুইজারল্যান্ড। যা ‘যন্ত্রণাহীন স্বেচ্ছামৃত্যু’ নিশ্চিত করবে। তারা তার নাম দিয়েছে সারকো। যন্ত্রটি এর ব্যবহারকারীকে ব্যথাহীন মৃত্যু দান করবে। এই আশ্চর্য ইচ্ছামৃত্যুতে ব্যবহার করা হবে হাইপোক্সিয়া এবং হাইপোক্যানিয়া (এর ব্যবহারে টিস্যু স্তরে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয় এবং রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইড হ্রাস পায়, যা ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়)।
যন্ত্রটির আকৃতি অনেকটা কফিনের মতো। কাচের ক্যাপসুলের অভ্যন্তরে ইউথানেশিয়া ডিভাইসটি এর ভেতরে অবস্থানকারীর অক্সিজেন স্তরকে চোখের পলকে জটিল স্তরে নামিয়ে আনে। একটি প্রকাশিত প্রতিবেদন মেশিনটির নির্মাতাদের উদ্ধৃত করে এমনটি জানায়।
প্রতিবেদন অনুসারে, পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগবে এক মিনিটেরও কম। তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ ও ব্যথাহীন মৃত্যু পাবেন আত্মহত্যাকারী। যন্ত্রণাহীন মৃত্যুযন্ত্রের সর্বশেষ সংস্করণ এটি। যেটি এমন ডিভাইস যা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণকারী ন্যূনতম ব্যথাসহ দ্রুত মারা যায়। এটি সেই সব দেশগুলোর জন্য যেখানে স্বেচ্ছায় মৃত্যু বা আত্মহত্যা করা আইনিভাবে বৈধ।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এক্সিট ইন্টারন্যাশনাল’ এই যন্ত্রটি তৈরি করেছে। ‘ডক্টর ডেথ’ হিসেবেও পরিচিত ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফিলিপ নিটশে ছিলেন এই যন্ত্রের উদ্ভাবনের নেপথ্যে। কীভাবে কাজ করবে যন্ত্রটি? প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বাইরে থেকে যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ভেতর থেকেও তা চালু করা যাবে।
অর্থাৎ মৃত্যুর প্রত্যাশায় যে ব্যক্তি ওই যন্ত্রের ভিতর ঢুকবেন, তিনি নিজেও যন্ত্রটি চালাতে পারবেন। এখানেই রয়েছে মূল সমস্যা।
মরণেচ্ছু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, এই পরিস্থিতিতে তারা অচেতন হয়ে পড়েন। পেশিশক্তি ব্যবহার করে কোনও কাজ করার মতো পরিস্থিতি তাদের বেশির ভাগের থাকে না। এই যন্ত্রে তারও সমাধান করা গিয়েছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির।
‘এক্সিট ইন্টারন্যাশনাল’-এর দাবি, ওই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে শুধুমাত্র চোখের পাতার নড়াচাড়া আঁচ করেই যন্ত্র সঙ্কেত গ্রহণ করতে পারবে। এমনই দাবি ব্রিটেনের একটি দৈনিক সংবাদপত্রের।
পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগবে এক মিনিটেরও কম। তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ ও ব্যথাহীন মৃত্যু পাবেন আত্মহত্যাকারী। যন্ত্রণাহীন মৃত্যুযন্ত্রের সর্বশেষ সংস্করণ এটি। যেটি এমন ডিভাইস যা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণকারী ন্যূনতম ব্যথাসহ দ্রুত মারা যায়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আপনার যেখানে প্রয়োজন সেখানেই নিয়ে যাওয়া যাবে সারকোকে। মূল মেশিন থেকে সারকোকে আলাদা করলে তা দেখতে হবে অনেকটা কফিনের মতো। সেই কফিনে এক বার শুয়ে পড়লেই সব শেষ!
ইউথেনশিয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে পৃথিবী জুড়ে। ‘ইউথেনেশিয়া’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ইউ’ এবং ‘থানাতোস’ থেকে এসেছে। ‘ইউ’ শব্দটির অর্থ সহজ এবং ‘থানাতোস’ কথাটির মানে মৃত্যু। অর্থাৎ ‘ইউথেনেশিয়া’ শব্দটির মানে দাঁড়াচ্ছে ‘সহজ মৃত্যু’ । দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি অকথ্য যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেলে তাকে সেই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি দিতে সহজে মৃত্যুর পথ করে দেওয়াই ইউথেনশিয়া। সাধারণত ওই ব্যক্তি কিংবা তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিজনের অনুরোধেই এমনটা করা হয়। নেদারল্যান্ড, কানাডা, বেলজিয়ামের মতোই সুইজারল্যান্ডেও ইউথেনশিয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডে আত্মহত্যায় সহায়তা প্রদান করা আইনি ভাবে বৈধ। সূত্রের খবর, গত বছর অন্তত ১,৩০০ মানুষ এই প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়েছেন। সংস্থার দাবি, এ বার আইনি বৈধতা পেল আত্মহত্যা করার যন্ত্র ‘সারকো’।
‘ডক্টর ডেথ’ হিসেবে খ্যাত চিকিৎসক ফিলিপ নিটশে বলছেন, ‘আগামী বছরের মধ্যে সারকো ব্যবহারের উপযোগী হয়ে যাবে সুইজারল্যান্ডে। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে বহু অর্থব্যয় হয়েছে। কিন্তু আমাদের আশা, আমরা প্রয়োগের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি’।
তবে যন্ত্র নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। অনেকে বলছেন যে, এই যন্ত্রটি আসলে গ্যাস চেম্বারকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেকের মতে, এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে আত্মহত্যাকে সব ক্ষেত্রে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত দু’টি এমন সারকো যন্ত্র তৈরি হয়ে রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরও একটি যন্ত্রের থ্রি-ডি প্রিন্টিং শুরু করেছে এক্সিট ইন্টারন্যাশনাল। আগামী বছর থেকে সুইজারল্যান্ডে এই পরিষেবা দেওয়া শুরু করাই লক্ষ্য সংস্থার। যদিও তাতে বিতর্কের ঢেউ থামছে না।
স্টাইলিশ সুইসাইড মেশিন তৈরি করে নিটশে সবাইকে চমক দিতে চাইলেও, অনেকেই এতে নাখোশ। চিকিৎসাবিদরা বলছেন, এটা নৈতিকতা বিবর্জিত এবং মানুষের জন্য অমঙ্গলজনক। তারা বলছেন আত্মহত্যাকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করেছেন নিটশে।
প্রতিবেদন অনুসারে, সারকো মেশিনটি সুইজারল্যান্ডে আইনি যাচাই-বাছাইয়ে পাস করার সাথে সাথেই এর নির্মাতারা এটিকে স্থাপন করবেন এবং আগামী বছর থেকে এটি সে দেশে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
আত্মহত্যার মেশিন তৈরির এমন অদ্ভুত চিন্তার পেছনে কাজ করেছিল ২০১২ সালে রাগবি খেলোয়ার টনি নিকলসনের ঘটনা। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে দীর্ঘকাল সঙ্কটজনক অবস্থায় টনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুর দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অনুমতি না মেলায় রাগবি খেলোয়াড়কে যন্ত্রণা নিয়েই মৃত্যুবরণ করতে হয়।
তখনই ‘সারকো’ বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ফিলিপ নিটশে। ঠিক করেছিলেন টনির মতো যারা আরোগ্যের অযোগ্য রোগে ভুগছেন তাদের কষ্টের হাত থেকে মুক্তি দেবেন। এখন দেখার বিষয় ‘সারকো’ স্বেচ্ছায় মৃত্যুতে আগ্রহীদের মধ্যে কতোটা সাড়া ফেলে।
১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার নর্দান টেরিটরিতে ইনজেকশনে আত্মহত্যাকে বৈধ হওয়ার পর পৃথিবীর প্রথম চিকিৎসক হিসেবে নিটশে ৪ জনের আত্মহত্যার তত্ত্বাবধান করেন। এরপর তিনি আত্মহত্যার বৈধতা আদায়ে একটি এনজিও খোলেন, যার নাম দেন ‘এক্সিট ইন্টারন্যাশনাল’।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যেও বৈধতা পেয়েছে ইনজেকশন দিয়ে আত্মহত্যা। তবে ১৮ বছরের বেশি কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন রোগে আক্রান্ত হন, যাতে তার ৬ মাসের বেশি বাঁচার সম্ভাবনা নেই, তখনই এই ইনজেকশন ব্যবহার করা যাবে। অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, কানাডা, কলম্বিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজ্যে স্বেচ্ছা মৃত্যুকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪২
আপনার মতামত জানানঃ