জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলীকে তালিবান গোষ্ঠি নামে সংগঠনের পক্ষ থেকে হুমকি দিয়ে ডাকের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ‘তালিবান গোষ্ঠীর বীর যোদ্ধা’ পরিচয়ে তার কাছে ডাকযোগে পাঠানো একটি চিঠিতে দেশ দখল করে তালিবানি শাসন কায়েমের হুমকি দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছেন।
বিচারক রুস্তম আলীর কাছে পাঠানো চিঠির খামে প্রেরকের ঠিকানায় ‘মো. আশরাফ আলী, দুর্গাদহ, ভাদসা, সদর, জয়পুরহাট’ লেখা রয়েছে। এই বিষয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রথমে রহিল আমাদের ছালাম। পরকথা: আমরা তালিবান গোষ্ঠী। আফগানিস্তানের মতো অতি শিগগিরই বাংলাদেশ দখল হবে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত শিবির এদের আমরা পছন্দ করি না। তালিবান অন্যায়ের পক্ষে নয়, ন্যায়ের পক্ষে, বাংলাদেশ চলবে তালিবানের অধীনে। বিচার আচার হবে কোরান সুন্না অনুযায়ী। জামায়াত শিবিরের জ্বালাও পোড়াও নির্মূল হবে এবার। জামায়াত শয়তানের দল। খুনি ফেরাউনের স্বভাব এই দলের। আপনি বিচারক, ন্যায় অন্যায় বিচার হচ্ছে না। কথায় কথায় আসামিদের সাজা দাও কিভাবে। ওই পরিবারে কত অশান্তি খাবার থেকে শুরু করিয়া নানা সমস্যার ভেতরে দয়ামায়া করিবেন। নামাজ সব সময় পড়িবেন। কোর্টে যাওয়ার সময় মাথায় তালিবান পাগড়ি পরিধান করিতে হইবে। পাগড়ি পরিধান না করিলে আদালতে যেতে দেওয়া হবে না, হামলার স্বীকার হতে হবে।’
চিঠিতে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘আদালতের আশপাশে পুলিশ থাকবে না, পাখির মতো মারব এদের। পুলিশ হচ্ছে দেশের শত্রু জনগণের শত্রু, ম…, ধ….., চাঁদাবাজিসহ প্রতিটি কাজে তাহারা জড়িত। ভারত বাংলাদেশ হবে তালিবান রাষ্ট্র। বাংলাদেশের নাম হবে ‘পূর্বপাশা’ আর ভারতের নাম হবে ‘সুলতান সাহা’ হিন্দু রীতিনীতি চলবে না দুই দেশে। বাংলাদেশের বহু জায়গা ভারতের দখলে আছে, তাহা তালিবান ফিরিয়ে নেবে ছাড়বে না। জয়পুরহাট জেলার পাঁচটি থানা ধ্বংস করব, সবার আগে পুলিশ মারব সব। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিপি, র্যাব, আনসার বাহিনী, বিমান বাহিনী এদের চুল পরিমাণ ক্ষতি হবে না। এই ৬টি বাহিনী কার ক্ষতি করে না। দূষিত পদার্থ হচ্ছে পুলিশ বাহিনী, তালিবান বাংলাদেশ নেওয়ার পর পুলিশ বাহিনী বাতিল করিবে ১০০% সত্য, এই পুলিশের বদলে হবে মুজাবীদ বাহিনী।’
হুমকি দিয়ে চিঠিতে লেখা হয়, ‘পাগড়ি ছাড়া যদি কোনো বিচারক অথবা আইনজীবী অত্র আদালতে প্রবেশ করে, তবে লাশ হয়ে ফিরে যাবে বাসায়। আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ পাইলে কিয়ামত আরম্ভ হবে। বিচারকরা আদালত করিবেন, চুল পরিমাণ ক্ষতি আপনাদের হবে না, তবে শর্ত মানিয়া আসতে হবে, পাগড়ি পরিধান করতে হবে, সব কালো কাপড়ের পাগড়ি হতে হবে। এ কথা অথবা আদেশ অমান্য করিলে বিরাট সমস্যা হবে। পরিশেষে জীবনটা হারাবেন।’
চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘আমেরিকা আমরা টাইম দেই নাই। এই সাধারণ বাংলাদেশ মাত্র। বাংলাদেশের ২৫ হাজার সদস্য আফগানিস্তানে রহিয়াছে। এছাড়া বাংলাদেশে আছে ৫৫ হাজার। আমাদের হাতে যত অস্ত্র আছে তাহা বাংলাদেশের সরকারের হাতে নেই। অফিস আদালতে কোনো প্রকার ঘুষ দালাল থাকবে না। প্রতিটি গ্রামের বিচার গ্রামেই হবে, এজন্য সরদার নিয়োগ হবে। বাদী বিবাদীকে ডাকিয়া মামলা আপস করার ব্যবস্থা করিবেন মহত্বের কাজ। কথায় কথায় মেয়েরা মামলা করে, এদের প্রশ্রয় দেবেন না। তালিবান রাষ্ট্র নেওয়ার পর নারী অধিকার খর্ব করা হবে। বেপরোয়াভাবে নারীরা চলতে পারবে না। এই পর্যন্ত সমাপ্ত।’
চিঠির শেষে লেখা হয়েছে— নিবেদক, তালিবান গোষ্ঠীর বীরযোদ্ধারা, দোগাছি ইউনিয়ন/ভাদশা ইউনিয়নসহ ৫টি উপজেলাবাসীর তালিবানরা।’
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মেদ ভূঞা গণমাধ্যমকে বলেন, চিঠিটি কে বা কারা, কী উদ্দেশে পাঠিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিচারকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহল জনগণের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়ানোর জন্য উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে দোষীদের আমরা খুঁজে বের করবো।
জয়পুরহাট জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও জয়পুরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, যারা বাংলাদেশকে তালিবান রাষ্ট্র করার চিন্তাভাবনা করছে, তারা দুঃস্বপ্ন দেখছে। যতই চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করুক না কেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। যে বা যারা এই চিঠি পাঠিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এই আইনজীবী।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের কিছু ধর্মান্ধগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক। ২০ বছর আগে যখন তালিবানের রমরমা অবস্থা ছিল, তখন এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানে গিয়ে তালিবানে যোগ দিয়েছিল। একই সঙ্গে ঢাকার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে স্লোগান দিয়ে বলেছিল, ‘বাংলা হবে আফগান, আমরা হব তালিবান’। তালিবান ফের আফগান মসনদে আসায় বাংলাদেশের ওই ধর্মান্ধগোষ্ঠী বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে— এমনই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। কাজেই আফগান নিয়ে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকতে হবে পরামর্শ তাদের।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪৬
আপনার মতামত জানানঃ