প্রতিবারই ঈদের আগে কর্মজীবি মানুষদের বাড়ি ফেরা নিয়ে ভোগান্তি চরম সীমা পার হয়ে যায়। এবার যা ঘটছে; তা আগের থেকেও এক ধাপ এগিয়ে। এভাবে হয়তো মানুষজনকে বাসেই ঈদ করতে হবে। স্বজনদের সাথে ঈদ করতে পারবে এমন আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে অকল্পনীয় দীর্ঘ জ্যামে ভুক্তভোগী মানুষেরা।
যানজটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা
নারায়ণগঞ্জ থেকে রংপুরের উদ্দেশে সোমবার (১৯ জুলাই) রাত ৮টার দিকে বাসে উঠেছেন নূরুল হুদা ও আমেনা আক্তার নামের এক দম্পতি। স্বাভাবিক সময়ে বাসে রংপুর যেতে সাত ঘণ্টা লাগে। তবে নারায়ণগঞ্জ থেকে ওঠার পর ১৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও মাত্র টাঙ্গাইল পৌঁছেছেন এ দম্পতি।
টাঙ্গাইল পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের ১৮ থেকে ২০ জায়গায় যানজটে পড়তে হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ জুলাই) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ওই দম্পতি ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কান্দিলা এলাকায় পৌঁছান।
গণমাধ্যমকে নূরুল হুদা বলেন, ‘সোমবার রাত ৮টার দিকে বাসে উঠেছি। আমরা যাবো রংপুর। স্বাভাবিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে রংপুর পৌঁছাতে লাগে সাত ঘণ্টা। আর আমাদের টাঙ্গাইল পৌঁছাতেই লেগেছে প্রায় ১৮ ঘণ্টা। সোয়া ২টা থেকে এখানে আটকে আছি। কখন বাড়িতে পৌঁছাতে পারবো তাও জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে একত্রে ঈদ করতে আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে বাড়ি যাচ্ছি। আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি। স্বাভাবিক সময়ে রংপুর যেতে বাসে ভাড়া লাগে ৫০০ টাকা, আর আজ যাচ্ছি এক হাজার টাকায়। তারপরও বাসে গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে।’
এদিকে, রায়হান তার স্ত্রী ও ৭ বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে ট্রাকে করে যাচ্ছেন জয়পুরহাটে। তিনিও সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রাকে উঠেছেন। টাঙ্গাইলের কান্দিলা এলাকায় পৌঁছাতে তাদের সময় লেগেছে ১৯ ঘণ্টা। এছাড়া ৫০০ টাকার ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫০০ টাকা।
রায়হান বলেন, ‘আমি বাস না পেয়ে ট্রাকে উঠেছি। স্বাভাবিক সময়ে আমার টাঙ্গাইল পৌঁছাতে সময় লাগে পাঁচ ঘণ্টার মতো। আর আজ টাঙ্গাইলের কান্দিলা পৌঁছাতে সময় লাগলো প্রায় ১৯ ঘণ্টা। জয়পুরহাট পৌঁছাতে সময় লাগে ৬-৭ ঘণ্টার মতো। আজ কত ঘণ্টা লাগবে সেটা জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাড়িতে কোনও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাড়িতে যাচ্ছি। প্রতি বছরই রাস্তায় যানজট লাগে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কাটাতে হয়। রাস্তায় খাবার, প্রস্রাব ও পায়খানা নিয়ে পড়তে হয় চরম বেকায়দায়। দুর্ভোগ কমাতে সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?’
জ্যামের আয়ু যেনো একালে ফুরাবে না
এদিকে, দুপুর সোয়া ২টা থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত যানবাহন ও সড়ক দুর্ঘটনার কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা।
ঘরমুখো মানুষগুলো বাস, ট্রাক, পিকআপভ্যান, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনে গাদাগাদি করে যাতায়াত করছেন। এতে করে করোনা সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২০ জুলাই) বিকেল অব্দি মহাসড়ক স্বাভাবিক হয়নি।
তবে মাঝেমধ্যে যানবাহন এগিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে একটু গিয়েই আবার থেমে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নূরুল হুদা, আমেনা ও রায়হানদের বাড়ি ফিরতে সড়কে যে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে আকাশচুম্বি টোল
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক যানবাহন পারাপার হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষে তথ্যমতে একদিনে প্রায় ৪৯ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। আর টোল আদায় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার (১৯ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ ৪৮ হাজার ৪২৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। সেতুর টোলপ্লাজায় আদায় হয়েছে দুই কোটি ৮৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৫০ টাকা।
এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব টোলপ্লাজায় ৩২ হাজার ৫৩১টি পরিবহনের বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৬০ টাকা এবং সেতুর পশ্চিম টোলপ্লাজায় ১৫ হাজার ৮৯২টি পরিবহনের বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার ৪৯০ টাকা। এতে গেল কয়েকদিনে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পরিবহন পারাপারে রেকর্ড হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর সাইট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, আগের চেয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা বেড়েছে। এতে ৪৮ হাজার ৪২৩টি পরিবহনের বিপরীতে টোলপ্লাজায় টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৫০ টাকা। তবে গতকাল টোল আদায়ের পরিমাণ বেশি ছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিজেএ/১৯১৫
আপনার মতামত জানানঃ