গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরোধী পরিস্থিতি ঘিরে ইসরায়েলের ভেতরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশটির বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তাদের মূল দাবি হলো—অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং হামাসের হাতে যারা এখনো বন্দি আছেন, তাদের দ্রুত মুক্ত করতে হবে। এই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আয়োজক হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম, যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে জিম্মি মুক্তির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা শুধু সরকারের প্রতি নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তিনি যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর করতে মধ্যস্থতা করেন এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তিতে সরাসরি ভূমিকা রাখেন। ধারণা করা হচ্ছে, হামাস যাদের বন্দি করেছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন এখনো জীবিত আছেন, যা ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে আরও উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থায় বড় ধরনের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। প্রধান মহাসড়কগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তেল আবিবের উত্তরে ইয়াকুম জংশনের কাছে কোস্টাল হাইওয়ে (রুট টু) পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, কারণ আন্দোলনকারীরা সেখানে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয় এবং যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ে থাকে। শুধু রাজধানীর আশপাশেই নয়, দেশজুড়ে মহাসড়কগুলোতে একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
এই আন্দোলনের আবেগময় দিকটিও স্পষ্ট। হামাসের হাতে আটক জিম্মি মাতান জাঙ্গাউকারের মা, আইনাভ জাঙ্গাউকার, সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “৬৯০ দিন ধরে সরকার কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।” তার বক্তব্যে উঠে এসেছে, নেতানিয়াহু জনগণের চাপকে ভয় পান এবং নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন। তার মতে, চাইলে এক বছর আগেই যুদ্ধের অবসান ঘটানো যেত এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো, কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে সরকার বেসামরিক নাগরিকদের বলি দিচ্ছে।
এই আন্দোলন শুধু যুদ্ধবিরতির দাবিই নয়, বরং সরকারবিরোধী জনঅসন্তোষেরও বহিঃপ্রকাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি সমাজে সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা আরও স্পষ্ট হচ্ছে, আর যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় সাধারণ মানুষের চাপ দিনে দিনে বাড়ছে।
আপনার মতামত জানানঃ