দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে দেশে কোভিশিল্ড টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৯৯ হাজার ১৮৪ ডোজ। চীনের সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন ২৭ হাজার ৯৬৮ ডোজ। এদিকে করোনাভাইরাসের একটি চীনা টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের (ট্রায়াল) অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনে প্রয়োজনীয় দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
টিকা গ্রহীতা
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৬৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৩ এবং নারী ৩৭ লাখ ৫৬ হাজার ৫১১ জন। এই টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৪২ লাখ ৭৯ হাজার ১৬৯ জন দ্বিতীয় ডোজ এবং ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন প্রথম ডোজ নিয়েছেন। টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারী পুরুষের সংখ্যা ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬০৮ এবং নারীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬১। আর টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৬৫ জন পুরুষ ও ২২ লাখ ১০ হাজার ৯৫০ জন নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে চীনের উপহার হিসেবে আসা সিনোফার্মের টিকার প্রয়োগ গত শনিবার শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে গণটিকাদান কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত সারা দেশে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২৭ হাজার ৯৬৮ জন। তাঁদের মধ্যে ১৩ হাজার ২২ জন পুরুষ ও ১৪ হাজার ৯৪৬ জন নারী রয়েছেন।
সিনোফার্মের প্রথম চালান আসার পর গত ২৫ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্যা সালাম সমতাকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে দ্বিতীয় ধরনের টিকা প্রয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে ১১ লাখ। এই টিকা দুই ডোজ করে সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে।
এ ছাড়া কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ গত সোমবার শুরু হয়েছে। ঢাকার তিনটি হাসপাতালে এই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। হাসপাতালগুলো হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রো-লিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এ টিকা নিয়েছেন ২৪০ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ১৩৮ ও নারী ১০২ জন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৪ জন, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রো-লিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৭৮ জন করে আছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, প্রথম ডোজ নেওয়া ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনের মধ্যে ১৪ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের সবাইকেই অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কেননা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও দুই কোম্পানির দুই ডোজের টিকা গ্রহণের কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি।
উল্লেখ্য, দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে। টিকার সংকট দেখা দেওয়ায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২ মে’র পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় টিকার জন্য নিবন্ধনও।
টিকার মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন
বুধবার ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি চাইনিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের (আইএমবিক্যামস) ভেরো সেল নামের এ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই ট্রায়াল শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ওপর টিকাটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর অনুমোদনের অনুরোধ জানায়।
এ ট্রায়াল কখন ও কোথায় শুরু হবে— গতকাল আইসিসিডিআরবিকে তা জানাতে বলেন বিএমআরসির পরিচালক অধ্যাপক রুহুল আমিন। অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা আরও দুটি টিকার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি কাউন্সিল।
২০২০ সালের আগস্টে চাইনিজ একাডেমি ও আইসিডিডিআরবি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই করে। ট্রায়াল পরিচালনার জন্য আইসিডিডিআরবিকে প্রায় এক দশমিক শূন্য পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে চাইনিজ একাডেমি। এ ছাড়া, ওয়ান ফার্মাকে স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয় একাডেমি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক এবিএম ফারুক বলছেন, ট্রায়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।
জীবনযাপন পদ্ধতি, জলবায়ু, দৈনন্দিন অভ্যাস ও মানুষের আচরণ একেক দেশে একেক রকম হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হলে, এ টিকা আমাদের জনগণের ওপর কেমন কাজ করে তা জানতে পারব আমরা। এর কার্যকারিতা, এটি কতটা ভালো কাজ করে এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কী— তাও জানা যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত গাইডলাইন অনুসরণ করে এ ট্রায়াল পরিচালনা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর কোনো ব্যতিক্রম গ্রহণযোগ্য হবে না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ট্রায়াল সফল হলে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে। আরও আগেই এ অনুমোদন দেওয়া উচিত ছিল সরকারের। একেবারে কিছু না হওয়ার চেয়ে দেরিতে শুরু হওয়াও ভালো। ট্রায়াল প্রক্রিয়ায় স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন। ফলে ভবিষ্যতে টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে দক্ষতা তৈরি হবে।
পোলিও ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকার মতো একটি নিষ্ক্রিয় টিকা ভেরো সেল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মালয়েশিয়াতে এ টিকার তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়।
আইএমবিক্যামস ছাড়াও ভারতের ভারত বায়োটেক ও বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক গত বছর মানবদেহে এ টিকা ট্রায়ালের অনুমোদন চায়। বিএমআরসি নির্ধারিত শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে গ্লোব বায়োটেক এ অনুমোদন পেতে পারে বলে জানান রুহুল আমিন। তবে, ভারতের বায়োটেকের আবেদনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি আমরা তিনি উল্লেখ করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৬১১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ